সত্যিই কি গমের রুটি খেলে ওজন কমে? জেনে নিন ওজন নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি
অনেকে অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য রুটি খেয়ে থাকে, তাই সত্যিই কি গমের রুটি খেলে ওজন কমে? এ সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। চলুন, কিভাবে গমের রুটি খেলে ওজন কমবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়ম অনুযায়ী গমের রুটি খেতে পারেন। কেননা এই রুটি আপনার অতিরিক্ত চর্বি মেদ ভুঁড়ি কমাতে সাহায্য করবে। তাই গমের রুটি খেলে কি ওজন কমে? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃসত্যিই কি গমের রুটি খেলে ওজন কমে? জেনে নিন ওজন নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি
সত্যিই কি গমের রুটি খেলে ওজন কমে?
গমের রুটি অত্যন্ত পুষ্টি ও ওজন কমায় এবং শরীরের জন্য উপকার। তাই সত্যিই কি গমের রুটি খেলে ওজন কমে? এজন্য কিভাবে রুটি খেলে ওজন কমবে সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সাধারণত গমের আটার রুটি সবচাইতে উপকার বেশি। কেননা এর মধ্যে ভিটামিন বি১ থেকে ভিটামিন বি৯ পর্যন্ত থাকে। যা আমাদের পুষ্টির চাহিদা মিটাবে, এছাড়াও এর মাঝে থাকে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম, ফাইবার যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি দূর করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আপনার পেট ভরা মনে হবে এজন্য অন্য কোন খাবারের প্রতি তেমন একটা আগ্রহ হবে না। যার কারণে ওজন কমতে সাহায্য করবে।
গম থেকে সাধারণত লাল আটা হয়ে থাকে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে যা আমাদের ম্যাগনেসিয়াম এর চাহিদা পূরণ করে থাকে এবং ওজন কমাতে দ্রুত কাজ করে থাকে। যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তারা গমের রুটি খেতে পারেন। কেননা এটা শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাবে যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। গমের রুটি এর মধ্যে থাকে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। যার কারণে আপনার শরীরের রোগ ব্যাধি হবে না। এছাড়াও হজমের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে দ্রুত কাজ করবে।
এর মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম রয়েছে, এজন্য অন্যান্য খাবার খেলে যেমন ক্যালরি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় কিন্তু এই রুটি খেলে সাধারণত রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং বেশি বৃদ্ধি পায় না। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে চান সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই গমের লাল রুটি খাবেন। আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অন্যান্য সবজি এর সাথে গমের রুটি খাবেন। তবে অনেকেই শুধু রুটি খেয়ে যাবেন তা কিন্তু নয় সাথে অল্প পরিমাণ ভাত খাওয়া যেতে পারে। কেননা কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজন রয়েছে।
অনেক পুষ্টিবিদ বলেন, যে ব্যক্তি ওজন কমাতে চান, সে যেন একটি মাজারী ধরনের গমের রুটি খায়। যার মধ্যে খুবই কম ক্যালোরি থাকবে, তবে এর মাঝে প্রোটিন আছে এবং ভিটামিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি থাকে। যা আপনার শরীরে পুষ্টি যোগাবে এছাড়াও এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদরা বলেছেন গমের রুটি দারুন কাজ করে থাকে কেননা এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনি রুটি খেতে পারেন তাহলে পুষ্টিও পাবেন পাশাপাশি ওজনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
ওজন কমানোর জন্য নিয়ম অনুযায়ী এই রুটি খেতে পারেন, আপনি যদি একসাথে চার থেকে পাঁচটি রুটি খেয়ে ফেলেন তাহলে কিন্তু ওজন আরো বৃদ্ধি পাবে। পুষ্টিবিদগণ বলেছেন আপনার ওজন উচ্চতা অনুযায়ী কতটা রুটি একসাথে খেতে পারবেন, এটা একজন চিকিৎসক অথবা পুষ্টিবিদ থেকে জেনে নিবেন। কেননা একজন চিকিৎসক আপনাকে সিদ্ধান্ত দেবে কতটি রুটি আপনি একসাথে খেতে পারবেন। তাই অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুষ্টিবিদরা যে চার্ট দিয়ে দিবে, সেই চার্টটি আপনাকে মেনে চলতে হবে, তাহলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করবে।
গমের রুটির পুষ্টিগুণ
গমের রুটি আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। তাই গমের রুটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা থাকলে, শরীরে উপকার হবে। চলুন, এর পুষ্টিগুণ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির কারণে সাধারণত আমরা ভাতের পরিবর্তে রুটি খেয়ে থাকি, সেই ক্ষেত্রে আপনি গমের রুটি খেতে পারেন। কেননা এটা প্রাকৃতিক একটি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার করবে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ফাইবার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভিটামিন এর সকল উপাদান রয়েছে। এছাড়াও আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন ই, জিঙ্ক রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার। এছাড়াও এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।
গমের রুটির কত ক্যালোরি
গমের রুটির মধ্যে ক্যালোরি থাকে, তাই গমের রুটির কত ক্যালোরি? যা আমাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে শরীরে কতটুকু ক্যালোরির প্রয়োজন। তা নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
অনেক আগে থেকেই মানুষজন রুটি খেতে পছন্দ করে থাকে। বিশেষ করে গমের রুটি, অনেকে শখ করে রাত্রিতে খেয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন রোগের কারণেও খেতে হয়। এছাড়াও এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে, সাধারণত রাত্রিতে বা সকালবেলা রুটি খেয়ে থাকি। তবে এই গমের রুটি পরিমাণ মত খেতে হবে, তা না হলে শরীরে ক্ষতি হবে। অনেকের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই আপনার শরীরের কত ক্যালরি প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী রুটি খেতে হবে। যদিও গমের রুটির মধ্যে উচ্চ মানের ক্যালরি রয়েছে, তবে ১০০ গ্রাম গমের মধ্যে ২৭০ থেকে ৩০০ কিলোক্যালরি থাকে।
গমের রুটির উপকারিতা
গমের রুটি ওজন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে। তাই গমের রুটির উপকারিতা রয়েছে। গমের রুটি আমাদের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি এবং ভিটামিনের উৎস হিসাবে কাজ করে থাকে। চলুন, এর উপকারিতার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
গমের রুটির মধ্যে প্রচুর ভিটামিন ই, জিংক পাওয়া যায়। আপনার চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও নিয়মিত ভাবে যদি আপনি এই রুটি খেতে পারেন, তাহলে আপনার চোখের ছানি পড়বে না। পাশাপাশি দৃষ্টি শক্তি ভালো করবে, তাই আপনার চোখকে ভালো রাখার জন্য এই রুটি খেতে পারেন। যারা ডায়াবেটিস এর সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গমের রুটি খেতে পারেন।কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম থাকে , যা আপনার রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করবে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করবে।
আপনার শরীরে যদি শক্তি যোগাতে চান সেক্ষেত্রে এই রুটি খেতে পারেন কেননা দ্রুত শক্তি যোগানোর ক্ষেত্রে দারুন কাজ করে থাকে এটা আপনার শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা পূরণ করবে এছাড়া যার কারণে আপনার একটু কাজ করলেই ক্লান্তি বহুত মনে হবে না ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে তাছাড়া মন এবং শরীর ভালো থাকবে এজন্য আপনি যদি সারাদিন দুর্বলতা অনুভবকে দূর করতে চান তাহলে এই রুটি খেতে পারেন। আপনার ত্বক যদি বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়, এক্ষেত্রে রুটি খেতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে, এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জিংক থাকে যা ত্বককে উজ্জ্বল করে।
এর মধ্যে ফাইবার থাকার কারণে আপনার শরীরে রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে, উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি দিবে। এছাড়া এর মধ্যে ভিটামিন বি৬ থাকে, যার কারণে আপনার ক্যান্সারের রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এই রুটির মধ্যে যে ধরনের গ্লাইসিমেক ইনডেক্স থাকে, তা ভাত খেলে এর চেয়ে খুবই কম হবে। যার কারণে ভাত খেলে ওজন বাড়ে কিন্তু এই রুটি খেলে ওজন বাড়বে না। এটা খুবই দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে এবং শরীরে গ্লুকোজ থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া খাওয়ার পরে অনেকক্ষণ পেট ভরা মনে হয়, যার কারণে আপনার শরীরে ওজন বৃদ্ধি পাবে না।
গমের রুটি খেলে কি গ্যাস হয়
অনেকে জানতে চায় যে, গমের রুটি খেলে কি গ্যাস হয়? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কেননা যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে, তারা গমের রুটি খেতে পারবে কিনা। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
গমের রুটি আমাদের অনেক উপকার করে, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ করতে চান, বিভিন্ন রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তারা এই রুটি খেতে পারেন। গমের রুটির মধ্যে গ্লুটেন উপাদান রয়েছে, যা আমাদের অনেকের পেটে সমস্যা হয়, এতে দেখা যায় অনেকের পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়। অনেকের ডায়রিয়া হতে পারে, বমি বমি লাগতে পারে। আবার যাদের আইবিএস এর সমস্যা রয়েছে তাদের প্রচুর পরিমাণে গ্যাস্ট্রিক থাকে, যার কারণে তারা রুটি খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অনেকের ডায়রিয়া হতে পারে, এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকে যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা হজম প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে পারে।
শেষ কথা
প্রত্যেকটি মানুষের উচ্চতা, ওজন, তাঁর কাজের ধরন, বিপাকের হার ও রোগব্যাধির মতো বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে ক্যালোরির চাহিদা ঠিক করা হয়। তার পরই নির্দিষ্ট করে বলা যায় তিনি ক’টা রুটি খাবেন।
তাই ওজন কমাতে চাইলে নিজের বুদ্ধিতে রুটি খাবেন না। তার বদলে একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। তিনিই আপনাকে জানিয়ে দেবেন দিনে কতগুলি রুটি খেলে ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url