ওমর (রা.)-এর শাসনকাল কেমন ছিল বিস্তারিত জানুন

অনেকে জানতে চায় যে, হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল? আসলে হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা হত। চলুন, ওমর রাঃ এর বিচার কার্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ওমর (রা.)-এর শাসনকাল কেমন ছিল বিস্তারিত জানুন
হযরত ওমর রাঃ বিচারকার্য সঠিক ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করেছেন। জনগণের কাছে বিচারক হিসেবে তার জবাবদিহিতা ছিল। তাই হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃওমর (রা.)-এর শাসনকাল যেমন ছিল

হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল? এ সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের জানা প্রয়োজন। কেননা তাঁর বিচার ব্যবস্থা ছিল ন্যায়-নীতির। চলুন, তাঁর বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যাক।
হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল

এর বিচার ব্যবস্থা ছিল স্বাধীন। নির্বাহী বিভাগ আলাদাভাবে কার্যক্রম চলতো এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল। বিচারকগণ এখানে নির্বাহী বিভাগের চাপ ছাড়া আইন অনুযায়ী তারা স্বাধীনভাবে বিচার করতেন। হযরত ওমর রাঃ বিচার ব্যবস্থা একদমই নিরপেক্ষ। তিনি বিচারকদেরকে নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে বিচার করার অধিকার দিয়েছিলেন। তিনি বিচারক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে একদম চরিত্রবান ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, নৈতিকতা, সু শিক্ষিত ও ইসলামী শরীয়ত মতে জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের কে তিনি প্রত্যেকটি প্রদেশের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতেন।

এমনকি তিনি প্রত্যেক জেলায় একজন করে কাজী নিয়োগ দিতেন। কাজীরা দুর্নীতি প্রলোভনে আকৃষ্ট না হয় সেজন্য তিনি উচ্চমানের বেতন দিতেন। যেন তারা ঘুষ বা কোন ধরনের অনৈতিক কাজ না করে, নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পারে সেই জন্য সকল সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলেন। হযরত ওমর রাঃ বিচারকদেরকে বলেছিলেন যে তোমরা নিরপেক্ষভাবে বিচার পরিচালনা করবে এতে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই বিচারকরা নিরপেক্ষভাবে স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারতো। তাছাড়া অমুসলিম যারা বসবাস করেছেন তাদের বিচারকার্য তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের মাধ্যমে করতে হবে।

হযরত ওমর রাঃ এর সময় বিচারের জন্য কোন প্রকার ফি দেওয়া লাগত না। সে ক্ষেত্রে জনগণের সুবিধা হত, তাছাড়া বিচার কার্য সাধারণত মসজিদেই অনুষ্ঠান সম্পাদনা করা হত। কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস এর আলোকে বিচার করতে হবে। এজন্য কোরআনে বা হাদিস অনুযায়ী একজন কাজী বা বিচারকের বিচার করতে হবে। তাই হযরত ওমর রাঃ কুফা, বসরা, দামেস্ক এই সকল রাজ্যের জন্য তিনি বিচারক নিযুক্ত করেছিলেন। খলিফা বিচার বিভাগের সব সময় দেখভাল করতেন। এছাড়া রায়টা সে পুনরায় বিবেচনা করত। আইনের চোখে যেন ধনী-গরীব উঁচু-নিচু কোন কিছুই এক পাক্ষিক না হয়।


ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা ছিল নিরপেক্ষ এবং বিচারের ক্ষেত্রে তিনি কঠোর আইনের ব্যবস্থা নিতেন। তাঁর নিরপেক্ষ বিচার সম্পর্কে একটি ঘটনা রয়েছে, মিশরের একজন গভর্নর এর পুত্র একটি খেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। সে ক্ষেত্রে একজন খ্রিস্টান যুবকের সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। এক্ষেত্রে গভর্নর রাগান্বিত হয়ে যান এই পরাজয় তিনি মেনে নিতে পারেন না। এতে তিনি সেই নিরহ যুবককে লাঠি দিয়ে প্রহার করলে লোকটা চিৎকার শুরু করেছিল। আহত যুবকটি স্থানীয় যারা রয়েছেন তাদের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হয় নাই।

এরপরে লোকটি হযরত ওমর রা এর কাছে আসলেন এবং অভিযোগটি বললেন। হযরত ওমর রাঃ তার ঘটনা শোনার পরে গভর্নর কে ডেকে পাঠালেন। তখন ওমর রাঃ লোকটিকে বলল তুমি এই লাঠিটা নাও যে পরিমাণ তোমাকে প্রহার করা হয়েছে তুমিও সেই পরিমাণ প্রহার কর। যুবক লাঠিটা নিয়ে গভর্নরের পুত্রকে প্রহার করতে ভয় পাচ্ছিল। এমতাবস্থায় তিনি গভর্নর কে ধমক দিয়েছিল। তখন ওমর রাঃ গভর্নর কে বললেন ক্ষমতার অহংকারে তুমি এই নিরীহ মানুষকে কেন মেরেছ এই সাহস তোমাকে কে দিয়েছে। আইনের চোখে সবাই সমান, যুবকটি দুই একবার তাকে প্রহার করেছিল।

পরবর্তীতে লোকটি ক্ষমা করে দিয়েছিল, এরপর ওমর রাঃ গভর্নর কে বলল মানুষকে দাস বানানোর চেষ্টা করবে না, তোমার পুত্রকে বোঝানোর চেষ্টা করবে। কিভাবে সে একজন স্বাধীন মানুষকে প্রহার করতে পারে? গভর্নর তখন লজ্জা পেলেন এবং পুত্রকে ক্ষমা চাইতে বললেন। এরপর ওমর রাঃ গভর্নর কে সতর্ক করে দিলেন। তারপর তিনি বললেন যদি তোমার পরিবার অন্যের প্রতি অত্যাচার করে সে ক্ষেত্রে তোমাকে গভর্নর থেকে বরখাস্ত করা হবে। এভাবেই হযরত ওমর রাঃ অসংখ্য বিচার কার্য পরিচালনা করেছেন। যিনি ন্যায় এবং সঠিক বিচার করেছেন। তাই হযরত ওমর রাঃ ন্যায়বিচারক বলা হয়।

হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা

খলিফা হযরত ওমর রাঃ প্রশাসনিকভাবে অনেক দক্ষ ছিলেন। তাই হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল? এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, হযরত ওমর রাঃ কেমন শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

হযরত ওমর রাঃ তিনি অত্যন্ত সুযোগ্য একজন প্রশাসক ছিলেন। তিনি বহুৎ রাষ্ট্র বিজয় লাভ করেছেন পাশাপাশি তিনি শাসক হিসেবে অত্যন্ত কঠোর এবং ন্যায়নীতির উপর অটুট ছিলেন। হযরত ওমর রাঃ বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থা চিন্তা করে প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠু এবং জনগণের উপযোগী করার জন্য তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রশাসন ব্যবস্থা কে কিভাবে পরিচালনা করা যায় সেভাবে তিনি গড়ে তুলেছিলেন। তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। তিনি আল্লাহর আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনা করেন।
হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা
তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন এবং জনগণের পক্ষে জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। তিনি জনগণকে সমালোচনা করার অধিকার দিয়েছিলেন। যরত ওমর রাঃ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন, তিনি দৈনন্দিন কার্যকলাপের ক্ষেত্রে পরামর্শ নিতেন। এছাড়াও মজলিস গঠন করেছিলেন, মজলিসুল খাস উপদেষ্টা পরিষদ মজলিসুল আম হলো সাধারণ জনতা। উচ্চ পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ তালহা, জুবায়ের ব্যক্তিগণ তার উপদেষ্টা মন্ডলী ছিলেন। এছাড়াও মহানবী সাঃ এর সাহাবীগণ তার এই মজলিসে আম এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

হযরত ওমর রাঃ পরামর্শ ব্যতীত কোন কার্যক্রমে পরিচালনা করেননি। তিনি বলেছিলেন পরামর্শ ব্যতীত খেলাফত চলবে না। তাই কোরআন ও হাদিসের আলোকে তিনি মজলিসের সূরার পরামর্শক্রমে কার্য সম্পাদন করতেন এবং সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করতেন। হযরত ওমর রাঃ কখনো নিজের মত শাসন কার্য পরিচালনা করেননি। তিনি সকল ব্যক্তির অনুমতিক্রমে শাসন কার্য পরিচালনা করেছেন। ঐতিহাসিকগণ বলেছেন হযরত ওমর রাঃ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসন কার্য পরিচালনা করেছেন। তবে সফলতা অর্জন করেছিল এবং এতে কোন সন্দেহ নাই।

তাছাড়া হযরত ওমর রাঃ জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসী ছিলেন এবং আরব জাতির বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন। আরব জাতির মুসলমানদের বাসভূমিতে যারা শত্রু ইহুদি ও খ্রিস্টান তাদেরও বসবাস করার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। হযরত ওমর রাঃ আরব দেশের বাইরে মুসলিম সৈন্যদেরকে জমি জমা ক্রয় করার অথবা চাষাবাদ করা নিষিদ্ধ করেছিলেন। এছাড়াও খলিফা মুসলিম সামরিক বাহিনীকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামরিক যাতে গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা অনুযায়ী অনেক শাসক তার মত শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করার চেষ্টা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম সম্রাট বাবর এর শাসন ব্যবস্থা।

হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক ব্যবস্থা

হযরত ওমর রাঃ প্রশাসনিকের ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন। তাই হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেমন ছিল সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন হযরত ওমর রাঃ এর প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ওমর রাঃ যখন বিভিন্ন রাষ্ট্র জয় করলেন এই বিজিত রাষ্ট্রগুলোকে সামরিক ও প্রশাসনিকভাবে ১৪ টি প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন। তিনি এই শাসনব্যবস্থা দূরবর্তী অঞ্চল থেকে সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। প্রত্যক অঞ্চলকে জেলা ও মহাকুমার বিভক্ত করেন এবং আইনের শাসন প্রবর্তন করেছিলেন। প্রত্যেকটা প্রদেশে শাসনকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন যাকে ওয়ালি বলা হয় এবং জেলার শাসনকর্তাকে আমিন বলা হয়। এদেরকে খলিফা উপদেষ্টা পরিষদের সাথে পরামর্শ করে নিযুক্ত করেছিলেন। তাছাড়া তারা যে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তা খলিফার নিকট বিবরণ দেওয়া লাগতো।

প্রত্যেকটি প্রদেশের ও জেলার ওয়ালী ও আমিনদের শাসন কার্য পরিচালনা করার জন্য হযরত ওমর রাঃ তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ক্ষমতার লিখিতভাবে উল্লেখ করেছেন। যেন তারা জনসাধারণকে সঠিক ন্যায়-নীতির সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। যেন তারা দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে অবহেলা না করে এবং স্বৈরাচারী মনোভাব না হয়। এছাড়াও দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা করা যাবে না এবং কাউকে বিনা অপরাধে পদচ্যুত ও শাস্তি প্রদান করা যাবে না। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মচারীর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব নিকাশ খলিফার নিকট প্রদান করা লাগত।


কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর যদি সম্পত্তি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে তাকে সেই সম্পত্তি রাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করে দেবে এবং তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। এই নীতির কারণে প্রাদেশিক শাসনকর্তা আবু হুরায়রা ও আমর বিন আল আস এর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। গুপ্তচার বাহিনী গঠন করেছিলেন যেন দূর্নীতিমুক্ত করা যায়। তিনি প্রত্যেকটা প্রাদেশিক অঞ্চলগুলোতে গুপ্তচর বাহিনী নিযুক্ত করেন এবং তাদের সকল তথ্যগুলো তারা খলিফার নিকট পেশ করবে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যারা সরকারি কর্মচারী ছিলেন তাদের বেতন ভাতা যোগ্যতা অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।

যারা সরকারি কর্মচারী ছিলেন যাদের যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের উচ্চ পর্যায়ে বেতন দেয়া হত। যেন তারা দুর্নীতি না করে সে ক্ষেত্রে একজন প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে ৫০০০ দিরহাম পর্যন্ত বেতন ভাতা দিয়েছিলেন। এছাড়াও তারা গনিমতের অংশ গ্রহণ করতে পারছে। সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়ার রাঃ কে ১ হাজার দিরহাম ভাতা প্রদান করা হত। এছাড়াও তিনি প্রাদেশিক শাসনকর্তা হিসেবে আরও বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছিলেন। তাছাড়া তিনি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্যই সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা মানসম্মত ভাবে নির্ণয় করেছিলেন।

হযরত ওমর রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ওমর রাঃ এর জীবনী জানা সবার প্রয়োজন। তাই হযরত ওমর রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক। তার জীবনী থেকে আমাদের অনেক শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে চলুন জানা যাক।

হযরত ওমর রাঃ কুরাইশ বংশের জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে। তার ডাকনাম ছিল আবু হাফস তার পিতা খাতা খাত্তাব এবং মাতা হানতামা। তাছাড়া তিনি প্রথম জীবনে ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিল কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ৩৩ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। নবী করীম সাঃ তাকে ফারুক উপাধি দিয়েছিলেন। হযরত ওমর রাঃ ইসলামের গ্রহণ করার পরে তিনি জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তার সাহসিকতা এবং নির্ভীকতা কুরাইশ বংশের মুসলমানদেরকে কাবা শরীফে প্রকাশ্যে নামাজ পড়তে কেউ বাধা প্রদান করতে সাহস পায় নাই।

হযরত ওমর রাঃ ইসলাম গ্রহণ করার পর মক্কায় প্রকাশ্যে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন মসজিদে নামাজ হবে। তাছাড়াও তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বদর, উহুদ, খন্দক খাইবার যুদ্ধ সহ আরো অনেক যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেন। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি আবু সুফিয়ানকে বন্দী করেছিল এবং তাবুক অভিযানে তিনি তার সকল সম্পদ অর্ধেক যুদ্ধক্ষেত্রে দান করেছিলেন। রাসুল সাঃ ইন্তেকালের পর তিনিই হযরত আবু বকর রাঃ কে প্রথম খলিফা হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবু বকর রাঃ অসুস্থ হয়ে গেলে ওসমান রাঃ, আলী রাঃ সকলের পরামর্শ তিনি উত্তর অধিকার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।

হযরত ওমর ও রাখালের ঘটনা

হযরত ওমর রাঃ বিভিন্ন ঘটনার বিচারক ছিলেন। তাই হযরত ওমর ও রাখালের ঘটনা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে সেখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারবো চলুন রাখালের ঘটনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

হযরত ওমর রাঃ একদিন প্রখর রোদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে হেঁটে মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যাচ্ছিলেন এবং সেখান থেকে ফেরার পথে গরমের কারণে একটি গাছের নিচে বসলেন। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যারা ছিল তারা খাবার-দাবারও ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সবাই খাওয়া শুরু করবেন, এমত অবস্থায় তারা দেখতে পেলে একজন রাখাল সে ভেড়া নিয়ে তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ওমর রাঃ তাকে বললেন আমাদের সাথে আসো খাওয়া-দাওয়া কর। রাখাল বলল না আমার খাওয়া সম্ভব না, আমি রোজা রেখেছি। আবারো বললেন আসো তুমি আমাদের সাথে একটু খাওয়া-দাওয়া করো। রাখাল আবারও সে বলল আমি রোজা রাখছি।

এরপরে ওমর রাঃ অবাক হয়ে বলল এই প্রখর রোদ্রের মধ্যে তুমি রোজা রেখেছো এতটুকু বাচ্চা এই পাহাড়ের ভেড়া চড়াচ্ছ কষ্ট হচ্ছে না। তখন রাখাল বলছিল আমি জন্ম মৃত্যুর মাঝখানে যে কয়েকটা দিন পেয়েছি এই কয়েকটা দিন নষ্ট করতে চাচ্ছি না। এই কয়েকটা দিনগুলোতে আমি আমল করে যাব। তার কথা শুনে খুবই আশ্চর্য হলেন। এত অল্প বয়সে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তখন রাখালের তাকওয়া পরীক্ষা করার জন্য ওমর রাঃ কিছু চিন্তা ভাবনা করলেন তখন তিনি বলছিল এই ভেড়ার পাল থেকে একটা ভেড়া আমাদের কাছে বিক্রি করো। আমরা নগদ তোমাকে টাকা দিয়ে দেব।

তোমার ইফতারের জন্য গোস্ত আমরা দেব। রাখাল বলল এই ভেড়া গুলো আমার না এটা আমার মালিকের, আমি তার অনুমতি ছাড়া আপনাদের কাছে বিক্রি করতে পারব না। এক্ষেত্রে ওমর রাঃ বলল তোমার মালিক যদি দেখে ফেলে একটা ভেড়া কমে গেছে সে ক্ষেত্রে তুমি বলে দিবা যে বাঘ খেয়ে ফেলছে। সে ক্ষেত্রে ভালো হোক তবুও তিনি রাজি হলেন না, বালকটি বলল যে আমার সৃষ্টিকর্তা তো দেখবেন আর মিথ্যা কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এভাবেই হযরত ওমর রাঃ মানুষকে পরীক্ষা করেছেন তার সততা নৈতিকতা দিয়ে।

উমর রা এর ইনসাফ

হযরত ওমর রাঃ এর ন্যায়নিষ্ঠা ছিল অন্যতম। তাই উমর রা এর ইনসাফ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন তিনি কি ধরনের ইনসাফ করেছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

একদিন ওমর রাঃ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় দেখলেন এক অন্ধ বৃদ্ধ ব্যক্তি ভিক্ষা করছে সেক্ষেত্রে সে ছিল একজন মুশরিক নাগরিক। তাকে জিজ্ঞেস করছিল আপনি কোন বংশের মানুষ সে বলছিল ইহুদি, তিনি তাকে বলেছিল ভিক্ষা কর কেন? উত্তরে তিনি বলছিল আমি বৃদ্ধ মানুষ কোন কাজ করা জানিনা। আমার নিজেরও চলতে হয় তাছাড়া জিজিয়া কর দিতে হয়। ওমর রাঃ লোকটাকে কিছু দান করে দিল। তাছাড়াও এই বয়স্ক অন্ধ ইহুদি যারা রয়েছে যারা অন্য ধর্মের লোকজন তাদেরকে জিজিয়া কর মাফ করে দাও।

হযরত ওমর রাঃ রাতের আঁধারে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াতেন কেন

অনেকে জানতে চায় যে হযরত ওমর রাঃ রাতের আঁধারে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াতেন কেন? এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। এতে আমরা অনেক শিক্ষা নিতে পারব। চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

জনগণ কে কোন অবস্থায় আছে তাদের সঠিক তথ্য জানার জন্য খলিফা রাতে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন রাত্রিতে ঘুরতে ঘুরতে একটি কুঠির সামনে গেল তার ভিতর থেকে একজন মা মেয়েকে বলতেছে দুধের সাথে পানি মিশিয়ে দাও, তাড়াতাড়ি কর ভোর হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি তার মাকে বলছিল খলিফা উমর রাঃ দুধে পানি মিশাতে মানা করেছে। তিনি যদি জানতে পারে তাহলে আমাদের সমস্যা হতে পারে। তখন মা বলল ওমর রাঃ আমাদের না দেখলে কিভাবে সমস্যা করবে।

মেয়েটি বলল আমি তাকে আনুগত্য করি দিবালোকে আর গোপনে তার সাথে অবাধ্যতা করবো। এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। তখন মেয়েটি আরো বলছিল যে ওমর রাঃ না দেখলেও আমাদের আল্লাহতালা দেখছেন। গোপনে এই সকল ঘটনা শুনে ওমর রাঃ বাড়ি চিহ্নিত করে রাখল এবং পরে তার ছেলের সাথে এই মেয়েকে বিবাহ দিয়েছিল। যার গর্ভে দুটি কন্যা সন্তান হয়েছিল, তাদের ঘরে ওমর বিন আব্দুল আজিজ রঃ জন্মগ্রহণ করেছিল। তাই অবশ্যই আমাদেরকে সন্তানাদির বিবাহের ক্ষেত্রে দ্বীনদারী এবং আল্লাহর ভয় ভীতি যারা করে তাদেরকে করানো উচিত।

হযরত ওমর রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা

হযরত ওমর রাঃ এর ইন্তেকালের ঘটনা আমাদের জানা প্রয়োজন। তাই হযরত ওমর রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই বিস্তারিত জানেন না। কেননা তার মৃত্যুর ঘটনা আমাদের জানা প্রয়োজন চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ওমর রাঃ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে ১০ বছর খিলাফত পরিচালনা করেছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইতিহাসে তার এই দশ বছর অন্যান্য শাসকদের অনুকরণ করার মতো। বিচার কার্য থেকে শুরু করে শাসন কার্য তিনি ন্যায় ও নীতির সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাঃ যেভাবে তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন একদিন মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন যাবার পথে আবু লুলু নামের একজন পারস্য খ্রিস্টান হযরত ওমর রাঃ কে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলেন এবং মারাত্মকভাবে আহত করেন। এই দুর্ঘটনার কয়েকদিন পরই তিনি ইন্তেকাল করেন।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা সুষ্ঠু এবং ন্যায় বিচার ছিল। যার কারণে তার রাজ্যে জনগণ সঠিক বিচার পেয়েছিল। তাছাড়া তিনি বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করে দিয়েছিল। যার কারণে বিচারকরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচার কার্য পরিচালনা করতে পেরেছে। তাই বিচারকদের জবাবদিহিতা করা লাগতো। তাই হযরত ওমর রাঃ এর বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল? এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে যুক্তির সাথে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি, আশা করি আপনার উপকারে আসবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url