মেথির বিস্ময়কর উপকারিতা -কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নিন

অনেকের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের দাগ এবং মেছতা হয়ে থাকে, তাই মেথি মুখে দিলে কি হয়? এগুলো দূর করার জন্য আপনি মেথি ব্যবহার করতে পারেন। এই জন্য এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, মেথি মুখে ব্যবহারের সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মেথি মুখে দিলে কি হয় বিস্তারিত জানুন
মেথি এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আপনার ত্বকের ক্ষেত্রে দারুন কাজ করে থাকে। তাই এই মেথি মুখে লাগাতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হয়ে যাবে। তাই মেথি মুখে দিলে কি হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃমেথির বিস্ময়কর উপকারিতা -কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নিন 

মেথি মুখে দিলে কি হয়

যারা মুখের বিভিন্ন ধরনের দাগ, ব্রণ, বয়সের ছাপ ইত্যাদি সমস্যায় পড়েছেন। তারা মেথি ব্যবহার করতে পারেন। তাই মেথি মুখে দিলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনি নিজেই তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। চলুন, কিভাবে মেথি আপনার মুখে দিলে উপকার পাবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

মেথির মধ্যে বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যা আপনার জীবানু প্রতিরোধ করতে পারবে। এছাড়াও এর মাঝে ভিটামিন সি, ভিটামিন-এ, আছে যা আপনার মুখের দাগ রোদে পোড়া দাগ এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের দাগের জন্য ভালো কাজ করে থাকে এবং আপনার চেহারা উজ্জ্বল ও মসৃণ, দাগ হীন হয়ে যাবে। এছাড়াও আপনাকে আর্দ্রতা রাখতেও সাহায্য করবে এজন্য মেথি দিয়ে আপনি এক ধরনের ফেস ক্রিম তৈরি করতে পারেন। চলুন, কিভাবে ফেস ক্রিম তৈরি করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমে আপনি কিছু মেথি নিবেন এবং সেটা ব্লেন্ডার করে গুড়া করে নিবেন। এরপরে হালকা গরম পানির মাঝে মিশিয়ে দিবেন এবং হালকা ভাবে জাল দিতে থাকবেন। এরপরে যখন ফুটে যাবে তখন এর মাঝে অল্প পরিমাণ হলুদ দেওয়া লাগবে যখন দেখবেন এই মিশ্রণটি অনেক গাঢ় হয়ে গেছে, তখন চুলা বন্ধ করতে হবে। তারপর এটা ছেকে নেবেন ঠান্ডা করে নিয়ে অ্যালোভেরা জেল এর সাথে মিক্স করে সংরক্ষণ করবেন এবং এরপরে ব্যবহার করতে থাকবেন। এছাড়াও মেথি পাটাতে পিষিয়ে গুড়া করে নেবেন, এরপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ও মধু মিক্সড করে একটি পেস্ট তৈরি করতে পারবেন।

আপনার ত্বকে যেখানে দাগ হয়েছে বা ব্রণ রয়েছে তার ওপরে এই পেস্ট লাগিয়ে দিতে হবে। এরপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন, শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার ত্বকের যে কোন দাগ বা ব্রণ সেরে যাবে। এই উপাদানটি আপনার বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এর গুড়ার সাথে গরম পানি এবং গরম দুধ ও মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করবেন। এরপরে মুখে লাগাতে পারেন তারপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার চেহারার বয়সের ছাপ দূর হবে।

মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর সকালবেলা পাটাতে বেটে এর সাথে টক দই এবং ময়দা মিশাতে পারেন। এরপরে একটি পেস্ট তৈরি করে আপনার মুখে হালকাভাবে লাগিয়ে দিতে পারেন, এরপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন। শুকানোর জন্য অপেক্ষা করবেন তারপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও এটা প্রাকৃতিক হিসেবে কাজ করে যা আপনার ত্বকের দাগ দূর করতে পারবেন এবং তখন নরম ও মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে পারবেন, দুধের সাথে অনেক সময় মেথি মিশিয়ে যদি আপনি ব্যবহার করতে পারেন এটি দেখবেন আপনার ত্বকের কালসে ভাব দূর হয়ে যাবে এবং উপকার পাবেন।

প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে মেথি ও টক দই খুবই উপকার করে। কেননা এটা প্রাকৃতিক উপাদান এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, সে হিসেবে অনেক উপকার করে থাকে। এটার ভালো ফল পাওয়ার জন্য ১ চামচ মেথির সাথে অল্প পরিমাণ টক দই দিয়ে এর পরে আপনার মুখে লাগাবেন তারপরে গলায়ও লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবেন তারপর পানিতে ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এ দুটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের মৃত কোষ গুলো দূর করে জীবিত করে থাকে।

এই উপাদানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে বিশেষ করে অনেকের রোদে পোড়া দাগ রয়েছে এ ধরনের দাগগুলো দূর করতে আপনি এই উপাদান সংগ্রহ করবেন। এজন্য প্রথমে দুই চামচ মেথির গুড়া নিবেন এরপরে পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে তারপর পানি ঠান্ডা করে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এরপরে রাত্রিতে ঘুমানোর পূর্বে সাথে ১ চামচ অলিভ অয়েল মিক্স করে নিবেন গলায় হাতে লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারেন এটা আপনার পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।

১ চামচ পরিমাণ মেথি গুড়া নিবেন তারপরে গোলাপজলটা নিতে পারেন এছাড়াও আপনি গোলাপজলের সাথে আরো এক চামচ পরিমাণ গোলাপ জল মিশিয়ে ও ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ত্বকে যদি এই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে থাকে অথবা রিং এর মত থাকে আর চামড়া শুকিয়ে যেতে পারে এ ধরনের ক্ষেত্রে উপকারের ক্ষেত্রে প্যাকই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। যেভাবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন এই পেস্টের সাথে সামান্য পরিমাণ হতে পারেন এবং বেসনটা ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে পারেন এরপরে যখন শুকিয়ে যাবে তখন ধুয়ে ফেলবেন।


প্রত্যেকটা মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে, তাছাড়া আল্লাহতালা পছন্দ করে থাকেন। স্বার্থ ছাড়া এটি আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। এজন্য এর সাথে দুধ এবং মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এতে অনেকটা হলেও যাদের অল্প বয়সেই চুল পেকে গেছে অথবা ত্বকের বয়সের ছাপ মনে হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে উপকার হলো। এজন্য প্রথমে আপনি মেথির পেস্ট নিবেন এবং হালকা কুসুম গরম পানি মিশিয়ে নিন এরপরে মধু মিশিয়ে নেওয়া হয়ে গেলে ত্বকে লাগাতে পারেন, কিছু সময় অপেক্ষা করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হিসেবে ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যাবে।

মেথি ভেজানো পানি মুখে দিলে কি হয়?

মেথির পানি মুখে লাগালে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হয়, ব্রণের দাগ কমে এবং ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। এটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবেও কাজ করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।

মেথির পানি মুখের জন্য উপকারী কারণ:ত্বক পরিষ্কার করে:
মেথি ত্বকের লোমকূপ খুলে দিয়ে ভেতরের ময়লা ও তেল দূর করতে সাহায্য করে।
ব্রণ ও দাগ দূর করে:
মেথি ব্রণের সমস্যা এবং অন্যান্য দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়:
এতে থাকা ভিটামিন সি এবং কে ত্বকের রং সমান করতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য ভালো:
এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে মসৃণ করে তোলে।
বয়সের ছাপ কমায়:
মেথিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
টোনার হিসেবে:
সারারাত মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি স্প্রে বোতলে ভরে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
ফেসপ্যাক হিসেবে:
৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা মেথি ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেস্টের সাথে দুধ বা মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আরোপড়ুনঃ
ফিটকিরিতে মুখ হবে চকচেকে। দূর হবে আরো অনেক রোগ।বিস্তারিত জানুন

ত্বকের জন্য মেথির উপকারিতা

ব্রণ ও সংক্রমণ দূর করে:
মেথির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ত্বকের প্রদাহ কমায়।

আর্দ্রতা ধরে রাখে:
এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্কতা কমিয়ে ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তোলে।

ত্বক পরিষ্কার করে:
মেথি লোমকূপের ভেতর থেকে ময়লা বের করে ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়:
মেথিতে থাকা ভিটামিন সি ও এ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং কালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

বলিরেখা ও দাগ কমায়:
মেথির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে বলিরেখা এবং দাগ ও রোদে পোড়া দাগ কমাতে সাহায্য করে।

অ্যালার্জি ও জ্বালাপোড়া কমায়:
মেথি ত্বকের জ্বালাপোড়া ও অ্যালার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

কীভাবে ব্যবহার করবেন
মেথি ফেসপ্যাক:
মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। এর সাথে দুধ বা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

ফেসপ্যাক (অন্য পদ্ধতি):
মেথি গুঁড়া করে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এর সাথে এক চিমটি হলুদ এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে মেথি ব্যবহার

মেথি দিয়ে চুলের যত্ন নিতে এটি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পেস্ট তৈরি করে চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া, মেথি ভেজানো পানি দিয়ে চুল ধোয়া, তেল ও দইয়ের সাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা অথবা মেথি ও ডিমের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিগুলো চুল পড়া কমাতে, খুশকি দূর করতে এবং চুলকে ঘন, উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে মেথি ব্যবহার
চুলের যত্নে মেথি ব্যবহারের কিছু উপায়:
মেথির পেস্ট:
২-৩ টেবিল চামচ মেথি দানা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
সকালে পানি ছেঁকে মেথিগুলো পেস্ট করে নিন।
এই পেস্টটি মাথার ত্বক ও চুলে ৩০-৪০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন
এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেথির পানি:
মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন এবং পানি ছেঁকে একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন।
শ্যাম্পু করার পর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন অথবা সরাসরি স্প্রে করুন।
এটি চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ করবে।
মেথি ও নারকেল তেল/অলিভ অয়েল:
মেথি বেটে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মেশান।
প্রয়োজনে সামান্য অ্যালোভেরা জেলও যোগ করতে পারেন।
এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে রাখুন এবং পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
মেথি ও টক দই:
ভিজিয়ে রাখা মেথির সাথে পরিমাণমতো টক দই মিশিয়ে একটি হেয়ার মাস্ক তৈরি করুন।
এই মাস্কটি মাথার ত্বক ও চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মেথি ও ডিম:
মেথি বেটে ডিমের সাদা অংশের সাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।
এই প্যাকটি চুলে লাগালে চুল ঘন ও সিল্কি হবে।
মনে রাখবেন:
মেথিতে প্রোটিন, নিকোটিনিক অ্যাসিড এবং লেসিথিন রয়েছে, যা চুল পড়া রোধ করে, চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, মেথিতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url