মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় বিস্তারিত জেনে চিকিৎসা নিন
অধিকাংশ নারীর তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে কিন্তু মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি? এ সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানে না। তাই জানলে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। চলুন, তলপেটে ব্যথার কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
নারীদের সাধারণত তলপেটে ব্যথা বিভিন্ন কারণ থাকে, তার মধ্যে পিরিয়ডের সময়। এছাড়াও ভারী কোন কাজ করলে এই ধরনের সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। তাই মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সুচিপত্রঃমেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় বিস্তারিত জেনে চিকিৎসা নিন
মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি
সাধারণত মেয়েদের বিভিন্ন কারণে তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে, তাই মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি? সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনি সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে পারবেন। চলুন, তলপেটে ব্যথা হলে যে সকল সমস্যা হয় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সাধারণত মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু করে বড় পর্যন্ত অনেকের পেট ব্যথা হয়ে থাকে, তবে সবারই হয় না। যাদের সমস্যা রয়েছে তাদেরই হয়ে থাকে, এই ব্যথা সাধারণত অনেক সময় একাই সেরে যায়। আবার অনেক সময় গুরুতর অবস্থা দেখা দিতে পারে। তাই কোন সময় গুরুতর অবস্থা হবে এবং কি করতে হবে সে সম্পর্ক জেনে নেওয়া যাক। মেয়েদের সাধারণত প্রতি মাসে পিরিয়ড এর সময় এ ধরনের ব্যথা প্রায় অনেকের হয়ে থাকে অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ নারীদের এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেকের প্রসাবের সমস্যা থাকে, জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে, অনেকের জ্বরও সব সময় লেগে থাকে।
অনেক নারীর জরায়ুর ভিতরে বাচ্চা বড় না হয়ে দেখা যায় ডিম্বাণুর ভিতরে স্থাপিত হয়। এজন্য অনেক সময় ডিম্বাণু ফেটে যেতে পারে। এতে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং তলপেটে ব্যথা শুরু হওয়ার কারণে অনেক সময় রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেক নারীদের হয়ে থাকে, যার কারণে তলপেটে চাপ লাগতে পারে এবং সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় তাহলে তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। এই পেটে ব্যথা মূত্রনালীতে চাপ পড়ে ইত্যাদি ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন কারণে তলপেটে পেটে ব্যথা হতে পারে, অনেকের গ্যাস্টিকের কারণেও হতে পারে।
আপনার যদি পেটের ডান পাশে তলপেটের দিকে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা করে, সে ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইডের সমস্যা হতে পারে। এটা মূলত আঙ্গুলের মত আকৃতি হয়ে ডানপাশে ব্যথা শুরু হয় এবং বৃহদান্তের সাথে যুক্ত হয়। আর এই ধরনের ব্যথাকে অ্যাপেন্ডিক্স বলা হয়। এটা সাধারণত নাভির চারপাশে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা করে এবং সরে গিয়ে পেটের ডান পাশে তলপেটে ব্যথা করতে থাকে। এই ধরনের ব্যথা হলে শুয়ে বা বসে থাকা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। এই ব্যথা গুলো সেরে তোলার জন্য অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং অপারেশনের মাধ্যমে এই অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলতে হবে।
আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যায়াম করেন এতে আপনার তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা করতে পারে। এজন্য অতিরিক্ত বেশি দৌড়াদৌড়ি করা যাবে না। এতে আপনার পেটের ব্যথা বাড়তে পারে। এছাড়াও অনেক সময় পানি শূন্যতা, অবসাদগ্রস্থতা ইত্যাদির কারণেও সাধারণত পেটের ব্যথা করতে পারে। এই ধরনের সমস্যা যদি প্রত্যেকবার হয়, তাহলে আপনার ব্যায়ামের নির্দিষ্টতা এবং পরিমাণমতো করতে হবে। যেখানে আপনি ব্যায়াম করবেন সেই প্রতিষ্ঠানে যদি ভারি ওজন এর যন্ত্র থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার হার্নিয়ার সমস্যা দেখা দিবে। তাই ভারী ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আমরা জানি তলপেটের দুই দিকে থাকে বৃক্ক। এখানে যদি পাথর হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডান পাশে ব্যথা করবে। তাছাড়া এই ব্যথা আস্তে আস্তে পিঠের নিচের দিকে চলে যাবে, কুচকিতেও ব্যথা করতে পারে। এই পাথর আস্তে আস্তে মুত্রনালীর দিকে যাবে এবং প্রসাবের সাথে রক্ত দেখা দিতে পারে এবং বমি বমি ভাব লাগতে পারে। এ ধরনের পাথর ছোট থেকে বড় হতে থাকে, যদি ছোট অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়া যায়, তাহলে প্রসাবের সাথে বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাছাড়া আপনাকে অপারেশন করতে হবে। এছাড়াও কিডনির সমস্যা দেখা দিলে সাধারণত তলপেটে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা হতে পারে।
মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কমানোর উপায়
মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কমানোর উপায় হল প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্রাকৃতিকগত ভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন। এতে আপনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকবে না এবং উপকারিতা পাবেন। চলুন সেই প্রাকৃতিক চিকিৎসা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আদা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা বহুকাল থেকেই চিকিৎসা করা হয়, বিশেষ করে ব্যথা কমানোর জন্য এবং যারা বমি করেন তাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটা একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এর মধ্যে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি থাকার কারণে আপনার তলপেটে ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়াও প্রাকৃতিকগতভাবে এই ব্যথা কমানোর জন্য আদা কুচি করে খেতে পারেন এবং চিবিয়েও খেতে পারেন। এছাড়াও আদা দিয়ে রং চা এবং গরম পানির মধ্যে আদা দিয়ে খেতে পারেন, এতে ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও আপনি আদা এমনি খেতে পারেন।
কলা ও আপেল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অনেক ফাইবার আছে, যা আপনার পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে এবং পেটের ব্যথা কমাতে পারে। এছাড়াও যাতে তাদের বমির সমস্যা রয়েছে এটাও সমস্যার সমাধান হবে এবং ডায়রিয়ার উপকার হিসেবে কাজ করবে। আপনার তলপেটে যদি প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা শুরু হয় সেক্ষেত্রে টোস্ট বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে, এতে আপনার তল পেটের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। তাছাড়া আরও একটি কাজ করতে পারেন, এমন রুটি বানাবেন যেটা হালকা পুড়ে যাবে বা পোজ করে খেতে পারেন।
তলপেটে ব্যথার জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এটা সাধারণত ব্যথা ও বমির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যদি কোন নারীদের তলপেটে ব্যথা করে, তাহলে তারা এই পুদিনার পাতা খেতে পারেন। এতে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হবে। মূলত ব্যাথা নাশকের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। তাই যাদের তলপেটের ব্যথা হয়ে থাকে তারা প্রাকৃতিক উপায়ে চায়ের সাথে পুদিনার পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও তলপেটে ব্যথা দূর করার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এটা খাদ্য হজম করতে সাহায্য করবে পেটের ব্যথা দূর করবে।
আপনবার যদি তলপেটে ব্যথা হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার গুলো খাবেন না। তবে নরম জাতীয় খাদ্যগুলো খেতে হবে, এতে পেটে ব্যথা আর থাকবে না। যদি প্রচন্ড পরিমাণে তলপেটে ব্যথা করে থাকে সে ক্ষেত্রে গরম পানির ব্যাগ নিতে পারেন অথবা বোতলের মধ্যে হালকা গরম পানি নিয়ে আপনার তলপেটে সেক দিতে পারেন। এতে শান্তি পাবেন এবং ব্যথাটা অনেকটা কমে যাবে।আপনার তলপেটে ব্যথা দূর করার জন্য আর একটা পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, এক কাপ পরিমাণে বেদানার রস নেবেন প্রতিদিন দিনে দুইবার করে খেতে পারবেন। এতে আপনার পেট ব্যথা দূর হবে।
যাদের গ্যাস্ট্রিকের জন্য ব্যথা করে তাদের ক্ষেত্রে পেট ব্যথা যদি শুরু হয় সে ক্ষেত্রে কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন এবং খালি পেটে খেয়ে নিবেন। এজন্য অল্প পরিমাণ কিসমিস পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং খালি পেটে খেয়ে নিতে হবে। এটি পেট ব্যথা, ঠান্ডা এবং এসিডিটি এর সমস্যা যদি থাকে তাহলে সেটা থেকে দূর করবে। উপরোক্ত এই সমস্যাগুলো যদি দেখা যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা যদি বুঝতে পারেন সে ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।
পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হলে করণীয়
অনেক নারীর পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা করে। তাই পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে এই ব্যথা থেকে অনেকটা মুক্তি পাবেন। চলুন, পিরিয়ডের ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য করণীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ নারীর এই সময়ে সাধারণত তলপেটে ব্যথা করে থাকে, যার কারণে তারা অনেকে টেনশনে পড়ে যায়। অনেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকে, যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং শরীরের ক্ষতি হতে পারে। তাই ওষুধ না খেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি আপনি চিকিৎসা করতে পারেন, তাহলে এই ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। চলুন, ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। প্রথমত, আপনি গরম পানির সেক দিতে পারেন। কেননা গরম পানির সেক দেওয়ার কারণে আপনার পেট ব্যথা, কমে যাবে। এজন্য গরম পানি একটি বোতলের মধ্যে নিয়ে যেখানে আপনার ব্যথা হয়েছে সেখানে সেক দিবেন।
পিরিয়ডের ব্যথার কারণে অনেক কষ্ট হয়ে থাকে এবং অনেকে সহ্য করতে পারে না। এই ধরনের ব্যাথার জন্য আপনি আদা খেতে পারেন। কেননা আদার মধ্যে যে উপাদান থাকে, তা যে কোন ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে। আদা কুচি কুচি করে এমনিও খেতে পারেন আবার চায়ের সাথে মিশেও খাওয়া যেতে পারে। এভাবে দিনে তিনবার খেতে থাকেন আশা করা যায় ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। উপরোক্ত খাবার গুলোর পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের যে ব্যায়ামটা রয়েছে সেটা করতে পারেন। এতে আপনি জোরে জোরে পেট ফুলিয়ে শ্বাস নিবেন এতে পেটের ব্যথা কমে যাবে।
তলপেটে ব্যথার জন্য আপনি আরেকটি ব্যায়াম করতে পারেন সেটা শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন পিরিয়ডের সময় যে ব্যথাটা হয়ে থাকে এর জন্য আধা ঘন্টার মত নিয়মিতভাবে হাঁটতে পারেন। হালকাভাবে হাঁটা চলাফেরা করলে আপনার তলপেটের ব্যথাটা অনেক কমে যাবে। আবার তলপাটে হালকা সরিষার তেল নিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন, এতেও দেখবেন আপনার পেটের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে এবং মানসিকভাবে সবসময় ভালো কিছু চিন্তা ভাবনা করবেন। গোসল করার সময় হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন, এতে আপনার পেটের ব্যথা কমে যাবে।
মেয়েদের তলপেটে ব্যথার ঔষধ
অনেকে তলপেটে ব্যথার বিভিন্ন ওষুধ খায়, তবে মেয়েদের তলপেটে ব্যথার ঔষধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খেতে হবে। কেননা যেকোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। চলুন, তলপেটে ব্যথার ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আপনি যদি এ ধরনের ব্যাথার ক্ষেত্রে ওষুধ খেতে চান সে ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যথা তীব্র ও স্থায়িত্ব ভাবে বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে। হঠাৎ এ তীব্র ব্যথা হওয়ার কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তলপেটে ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা বিভিন্ন কারণে তলপেটে ব্যাথা হতে পারে, সেজন্য আপনি একটি এলজিন ৫০ গ্রাম ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন এবং সাথে গ্যাসের ট্যাবলেট অবশ্যই খাওয়া লাগবে। তাহলে কিছুটা হলেও কমতে পারে তবে চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে।
তলপেটে ব্যথা কি প্রেগনেন্সির লক্ষণ
সাধারণত অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে তলপেটে ব্যথা কি প্রেগনেন্সির লক্ষণ? এটা বোঝার জন্য কিছু ধারণা প্রয়োজন। চলুন, কি কারণে আপনার পেট ব্যথা হচ্ছে বা এই পেট ব্যাথার লক্ষণ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
নারীদের বিভিন্ন কারণেই তলপেটের ব্যথা হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ থাকে তার মধ্যে তলপেটে ব্যথা করা অন্যতম একটি লক্ষণ। তবে নির্দিষ্ট করে বোঝা যায় না যে আসলে তলপেটে ব্যথা প্রেগনেন্সির কারণেই হচ্ছে। এটা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে তার মধ্যে যেমন অনেকের গ্যাস্টিকের কারণে আবার জরায়ুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে হতে পারে, প্রসাবের ইনফেকশনের কারণে হতে পারে, জরায়ু প্রসারিত হওয়ার কারণে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে ইমপ্লান্টেশন এর কারণেও অনেক সময় তলপাটে ব্যথা হয়ে থাকে।
শিশুর পেটে ব্যথা হলে করণীয়
অনেক শিশুর পেটে ব্যথা করে তাই শিশুর পেটে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে জানা থাকলে আপনার শিশুর পেটে আর ব্যথা করবে না। চলুন, কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনার শিশুর পেটের ব্যথা কমাবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ শিশু বিভিন্ন ধরনের প্রসেসিং খাবার খাওয়ার কারণে দেখা যাচ্ছে যে তাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য বদহজম বা পেটে ব্যথা করে থাকে। তাছাড়াও অনেক বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ানো হয় সে ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা বা ব্যাকটেরিয়ার কারণেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও কৃমি সংক্রমণের কারণে প্রসাবের ব্যথা বিভিন্ন কারণেই শিশুদের সাধারণত পেটব্যথা হয়। আবার অনেক শিশু লিভার জনিত সমস্যা পিত্তথলির সমস্যা সহ অ্যাপান্ডিসাইট বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে, যার কারণে শিশুদের এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
যে কারণেই পেটের ব্যাথা হোক না কেন সাধারণত প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এজন্য আপনার শিশু যদি কথা বলতে পারে তাহলে তার থেকে শুনে নিতে হবে এবং সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে। শিশুকে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এরপরে কি কারণে তার পেটের ব্যাথা হচ্ছে সেটা নির্ণয় করার পরেই চিকিৎসা দিতে হবে। সাধারণত ৩ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের এই ধরনের পেটের ব্যথা বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের প্রসেসিং খাবার খাওয়ার কারণে তাদের এবডোমিনাল পেইন হয়ে থাকে। শিশুরা সাধারণত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, খাওয়া-দাওয়া করতে চায় না এবং সবসময় কান্নাকাটি করে।
তলপেটে ব্যথা হলে কোন ডাক্তার দেখাবো
বিভিন্ন কারণেই তল পেটে ব্যথা হতে পারে তাই তলপেটে ব্যথা হলে কোন ডাক্তার দেখাবো? অনেকে জানতে চায় কেননা নির্দিষ্ট ভাবে রোগ নির্ণয় করতে না পারলে সুস্থ হওয়া সম্ভব না। চলুন, তলপেটে ব্যথার কারণে কোন ডাক্তার দেখাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আমাদের শরীরে অন্যতম কাজ করে থাকে লিভার এবং খাদ্যনালী, যা আমাদের খাদ্য হজমের ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। তবে যখন হজমের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রাপ্ত হয় সে ক্ষেত্রে অনেকের তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এজন্য দেখা যায় শরীরে এসিডিটি বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে অধিকাংশ মানুষের তলপেটে ব্যথা করতে পারে। একজন গ্যাস্ট্রো লিভার ডাক্তার দেখাতে পারেন। যেহেতু খাদ্যনালী পাকস্থলী অন্ত্র লিভার অগ্ন্যাশয় এই সকল বিষয় নিয়েই একজন চিকিৎসক পড়াশোনা করেছেন বিধায় তিনি চিকিৎসা করতে পারবেন।
যদি চিকিৎসক আপনার রোগ নির্ণয় করতে পারে সে ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসা দিতে সুবিধা হবে এবং অতি দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন। এজন্য রোগ নির্ণয় করার জন্য একজন গ্যাস্ট্রোলিভারের ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের আইবিএস, আলসার, লিভারের, কোলরেক্টা্ল ক্যান্সার হতে পারে। এই ধরনের চিকিৎসা করার জন্য গ্যাস্ট্রোলিভারের ডাক্তাররা সাধারণত এন্ডোসকপি,কোলনোস্কোপি এর মাধ্যমে ভিতর থেকে ছবি তুলে নেওয়ার মাধ্যমে তিনি পরিপাকতন্ত্রের সকল বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে থাকে, এরপরে লক্ষণ বুঝে চিকিৎসা করে থাকেন।
তলপেটে ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত
তলপেটে ব্যথা হওয়ার কারণে বিভিন্ন খাবার খেলে সুস্থ হবেন। তাই তলপেটে ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত? এ সম্পর্কে যদি আপনারা ধারণা থাকে তাহলে আপনি সেই খাবারগুলো খেয়ে সুস্থ থাকবেন। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আপনার যদি তলপেটের ব্যথা করে সে ক্ষেত্রে কাঁচকলা খেতে পারেন। এতে দ্রুত কাজ করে থাকে এবং যদি পেটের সমস্যা হয়, তাহলে বিভিন্ন ধরনের মাছ দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যথা দ্রুত কমে যাবে, এর মধ্যে ভিটামিন বি, পটাশিয়াম রয়েছে যা আপনার শরীরের জন্য দারুন কাজ করে থাকে। তাছাড়া আপনি তলপেটে ব্যথার জন্য দই খেতে পারেন, এতে ভালো ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিতভাবে এই দই খেতে পারেন, এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে দারুন কাজ করে থাকে, এটা প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে।
এছাড়াও অনেকে ক্যামেলিয়া চা খেয়ে থাকে যা আপনার বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা, বদহজম এই ধরনের সমস্যা দূর করতে দারুন কাজ করে থাকে। তাই আপনি নিয়মিত ভাবে এই চা খেতে পারেন, পিপারমেন্ট চা খেতে পারেন এটা এক ধরনের পেটের ব্যথা দূর করতে দারুন কাজ করে। তাই বিশেষ করে যাদের আইবিএস এর সমস্যা রয়েছে, পেটের মধ্যে সব সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় বা কোষ্ঠকাঠিন্য পেটের ব্যথা ডায়রিয়া, বদহজম এ ধরনের সমস্যা দূর করতে এই চা খেতে পারেন। আশা করা যায় এই চা আপনার পেট ব্যথা দূর করতে দ্রুত কাজ করবে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে, যদি আপনি তলপেটে ব্যথায় দীর্ঘদিন যাবত ভূগতে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে। এরপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হবে, কি কারনে আপনার এই ধরনের ব্যথা হচ্ছে সেটা জানতে হবে। এরপরে একজন ডাক্তার আপনার ব্যবস্থা নেবে, তাহলেই দেখবেন দ্রুত সুস্থ হবেন। মেয়েদের বিভিন্ন কারণেই তলপেটে ব্যথা হতে পারে, এজন্য আপনাকে আগে রোগ নির্ণয় করতে হবে। তাই মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি? এ সম্পর্কে আর্টিকেলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকার হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url