ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় বিস্তারিত জানুন
ইউরিন ইনফেকশন সাধারণত ছেলে ও মেয়ে উভয়ের হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ইউরিন ইনফেকশন হলে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক খাওয়া। তবে এটি ছাড়াও অনেক উপায় রয়েছে যেগুলো এখন আমরা নিচে আলোচনা করবো।
সুচিপত্রঃইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় ১০টি উপায়
- ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়
- ইউরিন ইনফেকশন কি ও কেন হয়?
- ইউরিন ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণসমূহ
- ইউরিন ইনফেকশন কাদের বেশি হয়?
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির উপায়
- ইউরিন ইনফেকশন হলে যেসকল খাবার খেতে হবে
- ইউরিন ইনফেকশন হলে যেসকল খাবার খাওয়া যাবে না
- ইউরিন ইনফেকশন প্রতিকারের উপায়
- কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত
- শেষ কথা
ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়
ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত জানবো। আপনার যদি ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে সবার প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্চে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। দিনে কম করে হলেও ৮ থেকে ১০ গ্লাস বা তার অধিক পানি পান করতে হবে। এরফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসবে এবং সাথে সাথে প্রস্রাব করে ফেললে এর পানি ইউরিনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াকে শরীর থেকে বের করে ফেলে ফলে ইনফেকশন দ্রুত কমাতে সাহায্য করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে একটি ভুল কখনোই করা যাবে না সেটি হচ্ছে অনেকের ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রস্রাব করার সময় জালাপুড়া করে এই কারণে সময়মত প্রস্রাব করে না। যার ফলে ইনফেকশন আরোও বেড়ে যেতে পারে। এখন আমরা ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় গুলো জানবো।
- প্রতিদিন কম করে হলেও ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
- প্রস্রাবের বেগ পেলে সাথে সাথে প্রস্রাব করে ফেলতে হবে।
- প্রস্রাবের পর কুসুম গরম পানি দিয়ে উক্ত জায়গা পরিষ্কার করা।
- ধনে ভেজানো পানি বা মেথির বীজের পানি ইত্যাদি ভেষজ পানি পান করা।
- প্রতিদিন নারকেল বা ডাবের পানি পান করা।
- সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়া।
- চিনি, মসলা ও ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়া।
- সম্ভব হলে ক্র্যানবেরি জুস নিয়মিত পান করা।
- পেট বা কোমরে ব্যথা হলে গরম পানির ব্যাগ দিয়ে সেঁক দেওয়া।
- ইনফেকশন দিন দিন বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ইউরিন ইনফেকশন কি ও কেন হয়?
ইউরিন ইনফেকশন বলতে মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হওয়াকে বোঝায়। অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে গেলে আমাদের মূত্রনালী সাধারণত চারটি অংশ দ্বারা গঠিত। এই অংশ গুলো হচ্ছে কিডনি, ইউরেটার, ব্লাডার এবং ইউরেথ্রা। এখানে কিডনির কাজ হচ্ছে শরীরের অতিরিক্ত পানি থেকে প্রস্রাব তৈরি করা। ইউরেটারের কাজ হচ্ছে কিডনি থেকে ব্লাডার পর্যন্ত প্রস্রাব নিয়ে যাওয়া। ব্লাডারের কাজ হচ্ছে প্রস্রাব জমা রাখা এবং ইউরেথ্রার কাজ হচ্ছে শরীর থেকে প্রস্রাব বের করে দেওয়া। এখন উপরের এই অংশ গুলোর কোন একটি বা কোন এক স্থানে যদি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় তাহলে তাকে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়। এখন আমরা ইউরিন ইনফেকশন কেন হয় এই বিষয়ে জনার চেষ্টা করবো।
ইউরিন ইনফেকশন সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে Escherichia coli বা E. coli নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত পায়ুপথে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন কারণে এটি মূত্রনালীতে চলে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করে থাকে। ইউরিন ইনফেকশনের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করার ফলে স্বাভাবিক প্রস্রাব হয় না এর ফলে মূত্রনালিতে খুব সহজে ব্যাকটেরিয়া সংক্রামন করে থাকে। এরপর যে অন্যতম কারণ সেগুলো হচ্ছে প্রস্রাব চেপে রাখা, অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করা, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া, অনিরাপদ যৌনসম্পর্ক করা ইত্যাদি।
ইউরিন ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণসমূহ
ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সাধারণ যে লক্ষন সেটি হচ্ছে প্রস্রাব করার সময় প্রচুর জ্বালাপোড়া করা। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে ইউরিন ইনফেকশন সাধারণত মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামনের ফলে হয় তাই আপনি যখন দেখবেন প্রস্রাব করার সময় প্রচুর পরিমাণ জ্বালাপুড়া করছে তখন এটি ইউরিন ইনফেকশনের একটি লক্ষন হিসেবে ধরে নিতে হবে। তবে এই সমস্যা যদি এক দিন হয়ে ভালো হয়ে যায় বা সারাদিন প্রচুর রোদের মধ্যে ঘুরাঘুরি করে আসার পর যখন প্রস্রাব করেন তখন এই সমস্যা দেখা দিলে এটি সাময়িক সমস্যা। তবে এই একই সমস্যা যদি সাময়িক না থেকে অনেক দিন পর্যন্ত থাকে তখন বুঝতে হবে এটি ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষন। এখন নিচে ইউরিন ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণসমূহ তুলে ধরা হলো।
- প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভব হওয়া।
- প্রস্রাবের পরও আবার প্রস্রাবের তীব্র বেগ অনুভব হওয়া।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বিশেষ করে রাতের বেলা।
- প্রস্রাবের রঙ ঘোলা হওয়া বা তাতে দুর্গন্ধ থাকা।
- প্রস্রাবে গোলাপি বা লালচে রঙের রক্তের চিহ্ন দেখা যাওয়া।
- পেটের নিচের অংশ ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
- প্রস্রাবের পর মূত্রথলিতে অসম্পূর্ণ খালি হওয়ার অনুভূতি হওয়া।
- হালকা জ্বর বা শরীরে দুর্বলতা অনুভব করা।
- কোমর বা পিঠে ব্যথা করা।
- শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বর, খাওয়ায় অনীহা বা মেজাজ খিটখিটে হওয়া ইত্যাদি।
ইউরিন ইনফেকশন কাদের বেশি হয়?
ইউরিন ইনফেকশন সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। নারীদের ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী স্বল্প দৈর্ঘ্যের হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া সহজেই মূত্রথলিতে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ করে যারা দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না বা দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখেন তাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। গর্ভবতী নারীদের হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি দেখা দেয়। আবার অনিরাপদ যৌনসম্পর্ক বা অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার করলেও নারীদের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়। তাই নারীদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।
এছাড়াও ইউরিন ইনফেকশন শিশু, বয়স্ক ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশি হয় থাকে। শিশুদের অনিয়মিত প্রস্রাব করার অভ্যাস এবং টয়লেট ব্যবহারে অসাবধানতার কারণে সংক্রমণ হতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই ইনফেকশন সহজেই আক্রমণ করতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ ইউরিনে জমে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। অনিয়ন্ত্রিত রক্তে শর্করার মাত্রা ইউরিন ইনফেকশনের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও দীর্ঘসময় বিছানায় শুয়ে থাকা বা প্রস্রাব ধরে রাখার অভ্যাস থাকলেও সংক্রমণ হতে পারে। মূলত উপরে বিবরণ দেওয়া মানুষ গুলোর বিশেষ করে ইউরিন ইনফেকশন বেশি হয়ে থাকে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির উপায়
ইউরিন ইনফেকশন থেকে দূরে থাকার জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো খুবই কার্যকর। আপনি যদি নিয়মিত এই সাধারণ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে জীবন যাপন করতে পারেন তাহলে এই ধরনের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির সব চেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে দৈনিক প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা। আপনি যদি প্রতিদিন কম করে হলেও ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে পারেন তাহলে আপনার শরীর থেকে সকল দূষিত পদার্থ ঘাম ও প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে ফেলবে। এরফলে আপনার মূত্রনালিতে যদি ব্যাকটেরিয়া থেকে থাকে তাহলে সেগুলো প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যাবে যার ফলে ইউরিন ইনফেকশনের মত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে কমে যাবে।
এছাড়াও ভেষজ উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে ইউরিন ইনফেকশন থেকে প্রাকৃতিকভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন ধনে বা মেথি ভেজানো পানি সকালে খালি পেটে খেলে এটি ইনফেকশনের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। ক্র্যানবেরি জুসে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়া আটকে যেতে দেয় না। আবার গরম পানির সেঁক ব্যথা ও অস্বস্তি থেকে তাৎক্ষণিক আরাম দিতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও নারকেল পানি ও বার্লি জাউয়ের পানি ইউরিনের জ্বালা ও জীবাণু কমাতে অনেক কার্যকর। তাই এই ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ইউরিন ইনফেকশন থেকে দূরে থাকার জন্য নিজেকে অবশ্যই পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। একটি পরিষ্কার শরীরে ব্যাকটেরিয়া সহজে সংক্রামন ঘটাতে পারেনা। তাই পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি কাজ।
ইউরিন ইনফেকশন হলে যেসকল খাবার খেতে হবে
ইউরিন ইনফেকশন হলে কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় যার ফলে ইউরিন ইনফেকশন থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রথমেই যে খাবার খেতে হবে সেটি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ পানি। আমরা উপরে ইতিমধ্যে প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়ার কথা বার বার বলে আসছি। এর কারণ হচ্ছে এই সমস্যা থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকারি উপায় যদি কোনটি থেকে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পান পান করা। পানি ছাড়াও আরোও অনেক খাবার আছে যেগুলো খেলে এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। সেই খাবার গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
- নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা।
- নারকেল অথবা ডাবের পানি পান করা।
- ক্র্যানবেরি জুস খাওয়া।
- দই ও প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খাওয়া।
- সবুজ শাকসবজি যেমন পালং, লাউ, ধুন্ধুল জাতীয় খাবার খাওয়া।
- ফলমূল যেমন তরমুজ, শসা, আপেল ইত্যাদি খাওয়া।
- মেথি ও ধনে ভেজানো পানি পান করা।
- আঁশযুক্ত খাবার যেমন ওটস, বাদাম, ফলের খোসাসহ অংশ খাওয়া।
- হালকা তরল খাবার যেমন সুপ, ভাতের মাড়, ভেজানো ছোলা খাওয়া ইত্যাদি।
ইউরিন ইনফেকশন হলে যেসকল খাবার খাওয়া যাবে না
ইউরিন ইনফেকশন হলে কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এসব খাবার ইনফেকশনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। সঠিক খাবার যেমন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে ঠিক তেমনি ভুল খাবার সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী করে ও শরীরকে আরও দুর্বল করে দেয়। অনেকেই অসাবধানতাবশত এমন কিছু খাবার গ্রহণ করেন যা ইউরিনে জ্বালাভাব, ব্যথা ও বারবার প্রস্রাবের চাপ বাড়িয়ে তোলে। তাই ইউরিন ইনফেকশনের সময় শুধু কি খাবেন তা জানার পাশাপাশি কি খাবেন না সেটিও জানা অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি কাজ। নিচে ইউরিন ইনফেকশনের সময় যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে তা তালাকারে দেওয়া হলো।
- অতিরিক্ত ঝাল ও মসলা যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা, কফি, সফট ড্রিংক ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার, যেমন চানাচুর, চিপস ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
- টকজাতীয় ফল যেমন আনারস, কমলা, লেবু ইত্যাদি অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
- মদ ও অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় ভুলেও পান করা যাবে না।
- ফাস্টফুড যেমন বার্গার, পিৎজা, সসেজ ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার বা ডেজার্ট জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন লাল মাংস বা ভাজা ডিম বেশি খাওয়া যাবে না।
- কৃত্রিম রঙ যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
- ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না ইত্যাদি।
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিকারের উপায়
প্রতিকার বলতে বোঝায় কোন রোগ হওয়ার আগেই সেটি মোকাবেলা করার পূর্ব প্রস্তুতি। অর্থাৎ ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার আগেই আমাদের এমন কিছু কাজ করতে হবে যাতে এই সমস্যায় আমরা আক্রান্ত না হয়। আমরা যদি নিয়মিত এই অভ্যাস গুলো গড়ে তুলতে পারি তাহলে ইউরিন ইনফেকশন আমাদের সহজে আক্রান্ত করতে পারবে না। নিচে সহজ ও কার্যকরভাবে ইউরিন ইনফেকশন প্রতিকারের উপায় তুলে ধরা হলো, যা নিয়মিত মেনে চললে সংক্রমণ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে আশা করা যায়। উপায় গুলো হচ্ছেঃ
- প্রস্রাবের বেগ আসলে আটকে না রেখে সরাসরি প্রস্রাব করা।
- প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা।
- প্রস্রাব করার পর ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা।
- নিয়মিত ক্র্যানবেরি জুস খাওয়ার চেষ্টা করা।
- নিয়মিত ডাব বা নারিকেল পানি পান করা।
- পেট বা কোমরে ব্যথা হলে গরম পানির সেঁক দেওয়া।
- নিয়মিত ধনে বা মেথির ভেজানো পানি পান করা।
- বেশি করে আঁশ ও প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার খাওয়া।
- অতিরিক্ত ঝাল, লবণ, ক্যাফেইন ও নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করা ইত্যাদি।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত
ইউরিন ইনফেকশন অনেক সময় ঘরোয়া চিকিৎসায় সেরে যায় তবে কিছু উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। যদি টানা তিন দিনের বেশি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ব্যথা বা ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ থাকে তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। বিশেষ করে প্রস্রাবে রক্ত দেখা গেলে এটি বিপদজনক লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও প্রস্রাবের রং ঘোলা হওয়া ও দুর্গন্ধযুক্ত হলে সেটিও সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় ইনফেকশন কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন কোমর বা পিঠে ব্যথা দেখা দেয়। এসব উপসর্গ অব্যাহত থাকলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।
শিশু, গর্ভবতী নারী এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন বেশি গুরুতর হতে পারে। যদি শরীরে হালকা জ্বর, কাঁপুনি বা বমি বমি ভাব দেখা দেয় তবে তা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন মা ও সন্তানের উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ইনফেকশন সহজে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এছাড়া বারবার ইনফেকশন হলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই এই ধরনের বিশেষ পরিস্থিতিতে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শেষ কথা
ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় নিয়ে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আলোচনা থেকে আমরা এতটুকু বুঝতে পেরেছি যে ইউরিন ইনফেকশন হলে সেটি দূর করার সব চেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা। আমরা শুধু এই ইনফেকশন দূর করার উপায় নিয়েই আলোচনা করিনি বরং ইউরিন ইনফেকশন কি এবং কেন হয় সেই সাথে কোন কোন ব্যক্তিরা এই সমস্যাতে বেশি আক্রান্ত হয় এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। অনেক সময় এই সমস্যা ঘরোয়া পদ্ধতিতেই ভালো হয়ে যায় তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তির উপায় নিয়েও উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
তাই আশা করা যায় যে উপরের তথ্য গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে ইউরিন ইনফেকশন থেকে রক্ষার অনেক উপায় জানতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url