ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন বিস্তারিত
মুসলিম হিসেবে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকেই ঈদের দিনে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। তাই সঠিকভাবে ঈদের নামাজের শর্ত মেনে চলা যায়, ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত, ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি বা ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত কিভাবে করলে নামাজ সহি এবং শুদ্ধ হবে এ সমস্ত বিষয়াদি নিয়ে আমরা প্রায় অনেকেই সঠিকভাবে ধারণা রাখি না।
আর এই সমস্যার কারণে হতে পারে আমাদের নামাজ অশুদ্ধ। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আপনাদের পোস্টে আমরা রেখেছি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম কানুন সহ যাবতীয় তথ্যাদি এবং আমাদের মা বোন মানে মহিলাদের ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন সমস্ত কিছু বিস্তারিত। তাই সবকিছু জানতে আমাদের পোস্টটি পড়তে থাকুন।
পেজ সুচিপত্রঃঈদের নামাজের নিয়ম কানুন , মহিলাদের ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন
1.ঈদের নামাজের ইতিহাস
ঈদ কথাটা বলতেই আমাদের সবার মনের মধ্যে একটা অন্য রকমের আনন্দ অন্যরকম এর অনুভূতি কাজ করে। এই অনুভূতিটা ধনী-গরীব সর্বশেষে সমস্ত সাধারণ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু ঈদ ঈদের নামাজ বা ঈদ এই জিনিস এর সূচনা কোথায়? আমরা কি আদৌ ঈদের নামাজের ইতিহাস জানি? কিভাবে ঈদের নামাজ এর প্রচলন হলো? ঈদের নামাজের শর্ত সমূহ কি কি?ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত নাকি আমাদের জন্য ফরজ? এ সমস্ত প্রশ্ন আমরা প্রায় সই করে থাকি কিন্তু সঠিক উত্তর জানিনা আপনাদের জন্য ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন এর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
ঈদের নামাজের ইতিহাস এবং ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন সঠিকভাবে জানতে হলে আমাদেরকে যেতে হবে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে। যে সময় আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ মক্কা থেকে মদিনার পথে হিজরত করলেন তাঁর বাল্যবন্ধু হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ) কে সাথে নিয়ে। তিনি সেখানে যাওয়ার পরে নতুন এক পরিবেশ পেলেন এবং সেই পরিবেশের সবাই তাঁকে সবাই অতি আপন করে নিল।
কিন্তু সেখানে মানুষের মধ্যেও সম্পূর্ণরূপে ইসলামের চেতনা জাগ্রত হয়ে ছিল না। যার হলেও বিভিন্ন ধরনের হাস্য- রসিকতা এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক কার্যকলাপ চোখে পড়তে লাগলো। সেখানে তখন দুই ধরনের উৎসব প্রচলিত ছিল। সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল মেহেরজান এবং নওরোজ।
এই অনুষ্ঠান মূলত পারোস্য সাংস্কৃতিক মনোভাবে তৈরি এবং মূলত বসন্ত পূর্ণিমার এবং হেমন্ত পূর্ণিমার উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। আর এ সমস্ত আচার-বিচার কোনভাবেই ইসলামিক কোন দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ যোগ্য ছিল না। এগুলোর তুলনা করলে কিছুটা আমাদের দেশেও কালচারের যে মেলা বা বিভিন্ন সার্কাস অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে; আমরা যেগুলো গ্রাম অঞ্চলে দেখে থাকি সেই সমস্ত বিষয়ের সাথে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ।
আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) এরূপ অবস্থায় ডাক দিলেন এবং একত্র করলেন এবং তিনি বললেন, "তোমাদের এই রকম আনন্দ উৎসব কারণ কি?" এর উত্তরে মদিনাবাসীরা উত্তর দিল, "আমরা তো আমাদের জাহেলিয়াত যুগ থেকেই এই উৎসব পালন করে আসছি।" মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তাদের এই কথার উত্তরে বললেন, " মহান আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে তোমাদের এই সমস্ত উৎসব এর পরিবর্তে অন্য দুইটি দিন তোমাদের আনন্দ উৎসব পালন করার জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই দিন দুটিকে তোমরা ঈদ হিসেবে পালন করবে। আর সেই পবিত্র দিন দুটি হল ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা।"
এটি ছিল মূলত আমাদের ঈদ প্রবর্তন হওয়ার ইতিহাস। তবে নিঃসন্দেহে ঈদের দিন বেশ কিছু সুন্নাত কাজ আমাদের মুসলিম সমাজের প্রতিটি মানুষকেই মেনে চলতে হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় এসমস্ত কাজগুলোকে তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন এবং আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাঁর জীবনাদর্শের সুন্নাহ। এসমস্ত কাজকে বলা হয় করণীয় এবং বর্জনীয় কাজ।
2.ঈদের নামাজের শর্ত
ঈদের দিন একজন মুসলিমকে বেশ কিছু কাজ ঈদের নামাজের শর্ত হিসেবে মেনে চলতে হয়। আমরা সবাই জানি যে ঈদের নামাজ ওয়াজিব। ওয়াজিব কাজ ফরজ কাজ এর মতই আবশ্যক, অর্থাৎ আমাদের সকলের জন্য ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া একান্ত কর্তব্য আর ঈদের নামাজে হিতবাদ বা জামাতবদ্ধ হয়ে পড়তে হয় তাই প্রত্যেকটি মানুষের এই মসজিদ বা ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। তবে এই ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে, ঈদের নামাজের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু নিয়ম কানুন আমাদের মেনে চলতে হয়।
ঈদের নামাজের শর্ত সমূহঃ
১. খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা এবং এই দিন রোজা রাখা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
২. যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি গোসল করা এবং সবচেয়ে উত্তম কাপড় পরিধান করে কিছু খুশবু বা সুগন্ধি বা আতর ব্যবহার করা
৩. এরপর যদি ঈদুল ফিতর হয় তবে নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়া এবং যদি কুরবানীর ঈদ হয় তবে কুরবানী হওয়ার পরে খাওয়া।
৪. সদকাতুল ফিতর আদায় করা অর্থাৎ অসহায় গরীব দুঃখীদের মধ্যে কিছু অর্থ নামাজের পূর্বে বিলিয়ে দেওয়া।
৫. খুব দূরে মসজিদ না হলে যত সম্ভব পায়ে হেটে মসজিদে বা ঈদগায়ে যাওয়া। এবং যেতে যেতে তাকবীর দেওয়া। যদি ঈদ-উল-ফিতর হয় তবে তাকবীর ধ্বনি ধীরে ধীরে এবং যদি কোরবানির ঈদ হয় তবে তাকবীর ধ্বনি যতটা পারা যায় উচ্চস্বরে দেওয়া।
৬. মসজিদের প্রতিবেশী বা অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে দেখা হলে তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং এবং তাদের জন্য শুভেচ্ছা প্রার্থনা করা "তাকাব্বালুল্লাহা মিন্না ওয়া মিনকুম" অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে এবং আমাকে কবুল করুন।
৭. ধীর স্থির ভাবে ঈদের নামাজের সময়সূচী মেনে মসজিদে বা ঈদগাহে যাওয়া এবং সেখানে বসে ঈদের নামাজের খুতবা শোনা। প্রত্যেকটি মুসলিম মানুষের জন্য খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাই মনোযোগ সহকারে ঈদের নামাজের খুতবা শোনা আবশ্যক।
৮. এরপর 12 তাকবীরের সহিত ঈদের নামাজ আদায় করা। এবং প্রতিবেশীদের সাথে কোলাকুলি এবং কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে মসজিদে ঈদের নামাজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা।
মুসলিম হিসেবে প্রতিটি মানুষেরই অপর মুসলিমের উপর কিছু হোক এবং দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। ঈদের দিন মসজিদে ঈদগাহে প্রত্যেকটি মুসলিমের সাথে অপর মুসলিমের দ্বিধাদ্বন্দ্ব হোক রেষারেষি হোক তা সমাধান হয়ে যায়। এদিন বিশ্বভ্রাতৃত্বের প্রতিটি মানুষ এক হয়ে ওঠে। আমরা ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন সঠিকভাবে মেনে সালাত আদায় করব।
3.ঈদের নামাজের তাকবির সংখ্যা
এতক্ষণ আমরা ঈদের নামাজের ইতিহাস এবং ঈদের নামাজের শর্ত সমূহ দেখলাম। এবার আমরা দেখব ঈদের নামাজ পড়ার যাবতীয় বিস্তারিত তথ্যাদি। ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যা নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভিন্ন কনফিউশন থাকে যে ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যা কতটি? ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত? ঈদের নামাজ ওয়াজিব নামাজ এবং ঈদের নামাজের তাকবীর সংখ্যা মোট ১২টি। ঈদের নামাজের খুতবায় মূলত ঈদের দিনের করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্যাদি সহ রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন সুন্নত সমূহের আলোচনা করা হয়।
ঈদের নামাজের খুতবা বলতে সাধারণত বোঝানো হয় ঈদের নামাযের পূর্বে ইমাম সাহেব কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বক্তৃতা বা প্রস্তাবনা উল্লেখ করেন। যেসব বিষয়গুলোতে হারাম হালাল দিন দুনিয়া এবং আখেরাতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান এবং উপদেশ মূলক এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়াও খুতবার সময় বিভিন্ন সমসাময়িক প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। যাতে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের উক্ত বিষয় সম্পর্কে হেফাজত করেন।
ইমাম সাহেব খুতবা দেওয়ার জন্য যে জায়গায় অবস্থান করেন সেটাকে বলা হয় মিম্বার। রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম সর্বপ্রথম যখন খুতবা দিতেন তখন তিনি খেজুর গাছের একটি খুঁটির সঙ্গে কিছুটা হেলান দেওয়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকে খুতবা প্রদান করতেন। পরবর্তীতে যখন মিম্বার তৈরি করা হলো তখন তিনি তার উপর দাঁড়িয়ে অথবা মাঝেমধ্যে বসে থেকেও খুতবা প্রদান করতেন।
ঈদের নামাজের খুতবা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখানে ঈদের দিনের করণীয় বা ঈদুল আযহার দিনের কুরবানী মাংস কাটা মাংস বিতরণ এবং সংরক্ষণের পরবর্তীতে বর্জ্য নিষ্কাশন প্রণালী থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্যাদি সম্পর্কে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের কে অবগত করেন। আজ খুতবা দেওয়ার নিয়ম এর মধ্যেও বিষয়টি সেরকমই রয়েছে। তাই ঈদের নামাজের খুতবা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অযথা নিজেদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা না করে মনোযোগ সহকারে ঈদের নামাজের খুৎবা শোনা একান্ত কর্তব্য।
4.ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি
এবার আসি ঈদের নামাজের খুতবা পরের প্রসঙ্গে। এরপর আমাদের সবার জানা উচিত ঈদের নামাজের নিয়ম এবং নিয়ত ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি এবং ঈদের নামাজের ইমামতি করবেন নিয়ত কি হবে অর্থাৎ ঈদের নামাজের ইমামতির নিয়ত। এই সমস্ত বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে তাছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না।
ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের নামাজের কিছু পরিমাণ পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যগুলো নামাজের নিয়ম এর মধ্যে নেয়া হলো। নামাজের পূর্বে করণীয়। যেমন- কোরবানির ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়াটা উত্তম। অন্যদিকে ঈদুল ফিতর হলে ভোর বেলায় কিছু মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খেয়ে নামাজে যাওয়াটা সুন্নত কাজ। অন্যদিকে ঈদুল ফিতরের নামাজ কিছুটা বিলম্বে পড়া ভালো কিন্তু ঈদুল আযহার নামাজ যতটা পারা যায় আগে পড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
এছাড়া ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি কাজ আছে যেগুলো মুসলিম ব্যক্তির মেনে চলতে হয়। নামাজের প্রধান শর্ত আপনাকে পাক পবিত্র অবস্থায় থাকতে হবে এবং নামাজের নিয়ত করতে হবে। এই ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন এরমধ্যে ঈদের নামাজের নিয়ত বা সংকল্প অন্যতম। ঈদের নামাজের জন্য আপনাকে ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে করতে হবে। এই নিয়ত করার জন্য আপনি মুখে মুখে উচ্চারণের প্রয়োজন নেই তবে মনে মনে নিয়ত করা বা অন্তরে ধারণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ঈদের নামাজের নিয়ত সম্পন্ন করতে পারেন।
অন্যদিকে যে ব্যক্তি মুসল্লিগণ আর ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করবেন তিনি ঈদের নামাজের ইমামতির নিয়ত হিসেবে মনে মনে নিয়ত করবেন, " আমি কিবলামুখী হয়ে ১২ তাকবীরের সহিত ঈদুল আযহা / ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ এই মুসল্লিগণ এর ইমাম হয়ে আদায় করছি।" এইভাবে একজন ব্যক্তি ঈদের নামাজের।
অর্থাৎ একজন ব্যক্তি ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ১২ তাকবীরের মাধ্যমে যেকোনো একটি ঈদের নামাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
5.ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন
এতক্ষণ আমরা ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি, ঈদের নামাজের শর্ত, ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত ইত্যাদি সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা দেখব ঈদুল ফিতরের নামাজের সঠিক নিয়ম। অর্থাৎ আমরা কিভাবে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করব ঈদুল ফিতরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় বা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আমরা এই অংশে দেখতে পাব।
আমরা আগেই বলেছি ঈদের নামাজ ওয়াজিব। আর ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যা ১২ টি। অর্থাৎ১২ তাকবীরের নামাজ আদায় করতে পারবেন। এখন চলুন দেখে নেই ঈদুল আযহা নামাজের সঠিক নিয়ম।
ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের নিয়ম | ঈদুল ফিতরের নামাজ কিভাবে পড়তে হবেঃ
১. সর্বপ্রথম কাতার বদ্ধ ভাবে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। ইমাম সাহেব আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিবেন এবং হাত বাধবেন।
২. তাকে অনুসরণ করে ঠিক সেইভাবেই আমাদের কেও হাত বাধতে হবে। এরপর ছানা পড়া শেষ হলে ইমাম সাহেব "আল্লাহু আকবার" বলে হাত ছেড়ে দিবেন। তাকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবেও আমরাও "আল্লাহু আকবার" বলে হাত ছেড়ে দেবো। এভাবে পর পর আরো দুইবার "আল্লাহু আকবর" বলা হবে এবং শেষ বারের বেলায় হাত ছেড়ে না দিয়ে আমরা ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করে আবার হাত বাধবো।
৩. এই অবস্থায় ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে মিলিয়ে অন্য একটি সূরা পড়বেন। এরপর স্বাভাবিক নামাজের মতই তিনি রুকু এবং সিজদা করে প্রথম রাখার শেষ করবেন। আমরাও ঠিক তাকে অনুসরণ করে রুকু সেজদা করে প্রথম রাখার চেষ্টা করব।
৫. এরপর ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যাবেন এবং পুনরায় সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে মিলে অপর একটি সূরা পড়বেন। এরপর তিনি পরপর ৭ তাকবীর দিবেন।
৬. এই সাতটি তাকবীরের একটি তো হাত বাঁধবেন না। আমরাও ঠিক তাকে অনুসরণ করে ৭ তাকবীর দিয়ে হাত ছেড়ে দিব। এরপর স্বাভাবিকভাবেই "আল্লাহ হু আকবার" বলে ইমাম সাহেব কে অনুসরণ করেরুকুতে যাব।
৭. অতঃপর স্বাভাবিকভাবে সেজদা করে তাশাহুদ দুরুদ শরীফ এবং দোয়ামা সূরা পাঠ করে সালাম এর মাধ্যমে নামাজ শেষ করব।
6.ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদুল ফিতরের নামাজের মতোই মুসলিম উম্মার জন্য ঈদুল আযহার নামাজ ও সঠিক নিয়ম মাফিক পড়তে হয়। ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার নিয়ম এবং ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম প্রায় একই। তাও আপনাদের সুবিধার জন্য ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার নিয়ম বা কোরবানির ঈদের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেওয়া হল।
ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম | কোরবানির ঈদের নামাজের নিয়মঃ
১. সর্বপ্রথম কাতার বদ্ধ ভাবে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। ইমাম সাহেব আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিবেন এবং হাত বাধবেন।
২. তাকে অনুসরণ করে ঠিক সেইভাবেই আমাদের কেও হাত বাধতে হবে। এরপর ছানা পড়া শেষ হলে ইমাম সাহেব "আল্লাহু আকবার" বলে হাত ছেড়ে দিবেন। তাকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবেও আমরাও "আল্লাহু আকবার" বলে হাত ছেড়ে দেবো। এভাবে পর পর 7 বার "আল্লাহু আকবর" বলা হবে ।
৩. এই অবস্থায় ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে মিলিয়ে অন্য একটি সূরা পড়বেন। এরপর স্বাভাবিক নামাজের মতই তিনি রুকু এবং সিজদা করে প্রথম রাখার শেষ করবেন। আমরাও ঠিক তাকে অনুসরণ করে রুকু সেজদা করে প্রথম রাখার চেষ্টা করব।
৫. এরপর ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যাবেন এবং পুনরায় সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে মিলে অপর একটি সূরা পড়বেন। এরপর তিনি পরপর ৫টি তাকবীর দিবেন।
৬. আমরাও ঠিক তাকে অনুসরণ করে ৫ তাকবীর দিয়ে হাত ছেড়ে দিব। এরপর স্বাভাবিকভাবেই "আল্লাহ হু আকবার" বলে ইমাম সাহেব কে অনুসরণ করেরুকুতে যাব।
৭. অতঃপর স্বাভাবিকভাবে সেজদা করে তাশাহুদ দুরুদ শরীফ এবং দোয়ামা সূরা পাঠ করে সালাম এর মাধ্যমে নামাজ শেষ করব।
অর্থাৎ ঠিক একই নিয়ম মেনে চলে আপনি কোরবানির ঈদের নামাজের নিয়ম মোতাবেক নামাজ আদায় করে ঈদুল আযহার নামাজ পড়তে পারবেন।
7.মেয়েদের ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন
মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন বা মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার বিধান বিষয়ে অনেকজনের অনেক ধরনের অভিমত রয়েছে। এই বিষয়ে সঠিক ধারণা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে অনেক ভিতরে যেতে হবে।
মেয়েদের ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে বলতে গেলে মেয়েদের ঈদের নামাজ আদৌ জায়েজ কিনা মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর সময় মেয়েরা কিভাবে ঈদের নামাজ পড়তো? এর পরবর্তীতে কি হয়েছিল এ সম্পর্কে আমাদের যাবতীয় তথ্য জানতে হবে। বিভিন্ন হাদিস এবং ঘটনা উল্লেখ আছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সেই সময়ে মেয়েদের ঈদের নামাযের জন্য জোরদার তাগিদ দিতেন। এমনকি ঋতুবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্র তাদেরকে ঈদগাহে দোয়ায় শামিল হওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিতেন।
কিন্তু সেই প্রেক্ষাপট ছিল অন্যরকম। তখন মেয়েদের জন্য যথেষ্ট পর্দা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। তাদের পর্দার বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক তার মধ্য দিয়ে তারা ঈদগাহে ঈদের নামাজের সামিল হতেন। কিন্তু পরবর্তীতে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর খেলাফতকালে এই বিষয়টি রহিত করা হয়। কেননা সেই সময়ে মেয়েদের পর্দার বিষয়ে এতটাই জোর দেওয়া হতো যে ওয়াজিব নামাজের কারণে ফরজ পর্দা কোনভাবেই খেলাপ করার সুযোগ ছিল না।
এমনকি সেই সময়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তা এবং পর্দা নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) ঈদগাহে মেয়েদের নামাজ পড়ার বিষয়টি কে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেন। এমনকি বর্তমানে হযরত আবু হানিফা (রঃ) প্রচলিত মাযহাব হানাফী মাযহাব এর সকল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার কোন দরকার নেই বলে আখ্যায়িত করেন।
অন্যদিকে আমাদের বর্তমান সমাজে এমন অনেক দেখা যায়, মহিলারা মহিলাদের ইমাম হয়ে একত্রে ঈদের নামাজ আদায় করছেন। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি গুনাহের কাজ। কারন ইসলামী খেলাফতে কখনো নারীরা ইমাম হতে পারবেন না। অন্যদিকে ঈদের নামাজ জামাতে পড়তে হয়, জামাতে পড়া ছাড়া ঈদের নামায হবে না। তবে অনেক মাযহাবের ক্ষেত্রে মহিলাদের যথেষ্ট নিরাপত্তা এবং পর্দা মেনে চললে ঈদগাহে পূর্বে উল্লেখিত নিয়মে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া আছে।
মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার বিধান মূলত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর সময় থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিমত আপনি ঈদের নামাজ কিভাবে আদায় করবেন।
ঈদের নামাজ পবিত্র মুসলিম উম্মার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। ঈদের নামাজের সময় একে অপরের সাথে দেখা হয় পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে বন্ধ এবং তাদের মধ্যকার সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয় নতুন করে সম্পর্কের সূচনা হয়। তাই আমরা সঠিক নিয়ম মত ঈদের নামাজ আদায় করব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url