ইসুবগুলের ভুষির ৮ টি উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত

 

ইসুবগুলের ভুষির অপকারিতা   ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা ও ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কি আপনি জানতে আগ্রহী? তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

ইসুবগুলের ভুষির ৮ টি উপকারিতা

 আমি আপনাকে আজ ইসুবগুলের ভুষির ৮ টি অজানা উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো যা অনেকেই প্রায় অজানা।

সূচিপত্র:ইসুবগুলের ভুষির ৮ টি উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

  1. ভূমিকা
  2. ইসুবগুলের ভুষি কি
  3. ইসুবগুলের ভুষির পুষ্টিগুণ
  4. ইসুবগুলের ভুষির উপকারিতা
  5. ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
  6. ইসুবগুলের ভুষির অপকারিতা
  7. শেষ কথা

1.ভূমিকা

ইসুবগুলের ভুষি খুব পরিচিত একটি খাদ্য। আর এর উপকারিতা অনেক বেশি। ছোট বড় অনেক অসুখের সমাধান পাওয়া যায় নিয়মিত এই ইসবগুল খেলে। তবে এটা খাবারের নিয়ম আমাদের সকলেরই অজানা।


পুষ্টিবিদরা বলেছেন, খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ইসবগুলের ভুষি পানিতে মিশিয়ে পান করা উচিত। দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখা ভুষি উপকারের বদলে ক্ষতি করে বেশি।

2.ইসুবগুলের ভুষি কি

ইসুবগুলের বৈজ্ঞানিক নাম Plantago ovata. ইসুবগুলের ভুষি মূলত একপ্রকার দ্রবণীয় ফাইবার যা সাইলিসিয়াম বীজের খোসা। রেচক বা লেকসিটিভ হিসেবেও পরিচিত। 

ইসুবগুলের ভুষির সর্বোচ্চ উপকারিতা
 ইসুবগুলের ভুষি মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, হাট বা হৃৎপিণ্ড এবং অগ্নাশয় সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় প্রমাণিত। শরীর সুস্থ রাখতে ইসুবগুলের ভুষির ভূমিকা অনেক।

3.ইসুবগুলের ভুষির পুষ্টিগুণ

ইসুবগুলের ভুষি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ একটি উপাদান। এই উপাদানগুলো শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। যেমন: ১ টেবিল চামচ ইসুবগুলের ভুষিতে থাকে ৫৩ শতাংশ ক্যালরি, ০ শতাংশ ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন।

4.ইসুবগুলের ভুষির উপকারিতা:  

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করে
  • গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করে
  • ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে
  • হার্ট ভালো রাখে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • হজমে সাহায্য করে
  • আমাশয় থেকে রক্ষা করে
  • অতিরিক্ত ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি

১.কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পাইলসের সৃষ্টি হয়। পাইলস রোগীদের সারা বছর ইসুবগুলের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও ইসবগুল পেট ব্যথা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর মিউসিলেজিনাসের কারণে আলসার জনিত পেট ব্যথা কম অনুভূত হয়। ইসুবগুলের পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। 

এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে দুই বা তিন চামচ ইসুবগুল মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে।

২.প্রসবের জ্বালাপোড়া দূর করে

অনেকেরই প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে। ইসুবগুলের ভুষি নিয়মিত খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। ভালো ফল পেতে আখের গুড়ের সাথে ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে সকাল বিকেল খেতে পারেন।

৩. গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করে

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন আর ভুলভাল খাদ্যাভ্যাসের কারণে গ্যাস্টিকের সমস্যায় কমবেশি সবাই ভুগে। আর এটি সমাধানের অন্যতম ঘরোয়া উপায় হলো ইসুবগুলের ভুষি। এটি পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। যার কারনে এসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলী রক্ষা পায়।

৪. ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে

ডায়রিয়ার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ইসুবগুলের ভুষি। এটি দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দইয়ে থাকে প্রবায়োটিক যা পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে কাজ করে। এদিকে ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সহায়তা করে।

 তাই দিনে দুবার ৭ থেকে ২০ গ্রাম ইসুবগুলের ভুসি খেলে ডায়রিয়া উপশম হয়। ডায়রিয়া থেকে সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা সবসময় ইসবগুলের ভুষি খান।

৫. হার্ট ভালো রাখে

হার্টের জন্য ইসুবগুলের ভুষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসুবগুলের ভুষির নিয়মিত খেলে হার্ট ভালো থাকে। এতে থাকা খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে এক ধরনের পাতলা স্তর সৃষ্টি করে যা খাদ্য থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে বিশেষ করে রক্তের শ্রীরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। 

এছাড়া এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দিতে কাজ করে। ফলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টির ভয় থাকে না।

৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ইসুবগুলের শরবত দারুন পথ্য হিসেবে বিবেচিত। ইসুবগুলের ভুষিতে আছে জিলাটিন নামক একটি উপাদান যা দেহের গ্লুকোজের শোষণ ও ভাক্সগার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এতে রক্তে সহজে সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না। এর ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিস।

৭. হজমে সাহায্য করে

এটি হজম ঠিক রাখার জন্য পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সাহায্য করে। ভাজাপোড়া খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা দেখা দিলে ইসুবগুলের শরবত দারুন কাজে আসে। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে রোজ সকালে খালি পেটে এটি খেতে হবে।

৮. আমাশয় থেকে রক্ষা করে

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ইসবগুল আমাশয় রোগের জীবাণু নষ্ট করতে পারে না। তবে আমাশয়ের জীবাণু পেট থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যার ফলে আমাশয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৯.অতিরিক্ত ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি

আপনি জেনে অবাক হবেন ইসবগুলের ভুসি শরীরে জমে থাকা চর্বি কমিয়ে চিকনও করতে পারে। অর্থাৎ আপনি কোন রোগে কি ভাবে খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে ইসবগুলের কার্যকারিতা বা রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারটি।

ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অতি উত্তম একটা পদ্ধতি রয়েছে। এটি খেলে লম্বা সময় পেট ভরা থাকবে ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা টাই কমে যাবে। যদি আপনি স্লিম হতে চান তাহলে কুসুম গরম পানির সাথে দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভাত খাওয়ার আগে খেয়ে নিন। অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠেও দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি এক ক্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।

 তাহলেও কিন্ত ওজন কমবে। ওজন কমানো শরীর থেকে চর্বি ঝরানো অবশ্যই গরম পানি এবং লেবুর রসের সাথে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেতে হবে। এতে পাকস্থলী পরিষ্কার হবে এবং শরীর থেকে চর্বি কমবে।

5.ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ইসুবগুলের ভুষির সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। সঠিক নিয়ম মেনে খেলে ক্ষতি কোন সম্ভাবনা থাকে না। বরং উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
ইসুবগুলের ভুষির সর্বোচ্চ উপকারিতা


ইসুবগুলের ভুষি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলো থেকে শরীর দূরে থাকে। এছাড়াও ইসবগুলের ভুষি রাতে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ইসুবগুলের ভুষি আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা যাবে না । এক গ্লাস পানির সাথে ২-৩ চামচ ভুষি ভালোভাবে মিশিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে নিতে হবে।

6.ইসুবগুলের ভুষির অপকারিতা

সব সময় মনে রাখতে হবে যে কোন জিনিসের উপকারের পাশাপাশি অবশ্যই অপকারিতা আছে। যে কোন জিনিস পরিমিত মাত্রায় খাওয়া ভালো কিন্তু বেশি খেলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইসুবগুলের ভুষি বেশি খেলে তা পাকস্থলীর টানটান ভাব সৃষ্টি করতে পারে তাই এটি পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে।
ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে যদি এলার্জি সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যাদের অন্ত্রের সমস্যা আছে তাদের এটি না খাওয়াই ভালো।

একটানা অনেকদিন ইসুবগুলের ভুষি খেলে ওজন কমে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে আমরা এটি খাব।

7.শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনেছেন গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি এ সম্পর্কে তথ্যগুলো। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারাযদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন।

তবে আমার এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন এবং প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এ রকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আবারও দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে। ভালো থাকুন ও প্রিয়জনদের ভালোবাসুন। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url