সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথা: কারণ, প্রতিকার ও যত্ন কিভাবে তা জেনে নিন
সিজারিয়ান অপারেশনের পর অনেক মায়েরই কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা সাধারণত অস্থায়ী হলেও, কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।আসলে সিজারের কারণে কোমরব্যথা হলেও সব সময় ব্যথার মূল কারণ কিন্তু সিজার নয়।
.jpeg)
গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়ামের অভাব, অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া, সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থায় শুয়ে-বসে থাকা ইত্যাদির কারণেও কোমরব্যথা হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্তনদানের সময় মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকেও কোমরব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই আর্টিকেলটি সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথার কারণ, প্রতিকার ও যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিব।
সুইচিপত্রঃসিজার পরবর্তী কোমর ব্যথা: কারণ, প্রতিকার ও যত্ন
- সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথার কারণ
- সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথার লক্ষণ
- সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথার প্রতিকার
- সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথা প্রতিরোধ
- কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
- কখন সিজার করাতে হয়
- পরিকল্পিত সিজার অপারেশন
- ইমারজেন্সি সিজার অপারেশন
- ব্রীচ অথবা অস্বাভাবিক অবস্থান
- সিজারিয়ান অপারেশনের ঝুঁকি
- ভবিষ্যৎ গর্ভধারণে ঝুঁকি
- উপসংহার
সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথার কারণ
- অপারেশনের কারণে: অস্ত্রোপচারের সময় কোমরের মাংসপেশি এবং লিগামেন্টগুলোতে টান পড়ে, যার ফলে ব্যথা হয়।
- এপিডুরাল বা স্পাইনাল অ্যানেস্থেসিয়া: অপারেশনের সময় দেওয়া এই অ্যানেস্থেসিয়া কোমরের মাংসপেশি ও স্নায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে।
- শারীরিক পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং শারীরিক পরিবর্তনের ফলে কোমরের উপর চাপ পড়ে।
- অতিরিক্ত ওজন বহন: সন্তানের যত্ন নেওয়ার সময় শিশুকে বহন করার ফলে কোমরের ব্যথা বাড়তে পারে।
- পেলভিক ফ্লোরের দুর্বলতা: গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের ফলে পেলভিক ফ্লোরের দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যা কোমর ব্যথার একটি কারণ হতে পারে।
সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথার লক্ষণ
- কোমরের তীব্র বা হালকা ব্যথা
- কোমরের দুর্বলতা
- পিঠে ব্যথা
- পায়ে ব্যথা
- চলাফেরার সময় সমস্যা
সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথার প্রতিকার
- বিশ্রাম: যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন।
- গরম সেঁক: গরম পানির বোতল বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করে কোমরে সেঁক দিন।
- ব্যথানাশক ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করুন।
- ফিজিওথেরাপি: একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে কোমরের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করার এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারেন।
- পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ: এই এক্সারসাইজ পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- যোগাসন: কিছু নির্দিষ্ট যোগাসন কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথা প্রতিরোধ
- সঠিক ভঙ্গি: দাঁড়ানো, বসা এবং শোয়ার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন।
- হালকা ব্যায়াম: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম করুন।
- ওজন কমান: অতিরিক্ত ওজন কোমরের উপর চাপ বাড়ায়, তাই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
- শিশুকে সঠিকভাবে বহন করুন: শিশুকে বহন করার সময় কোমরের উপর চাপ না পড়ার মতো করে বহন করুন।
- পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার: পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে শরীরকে শক্তিশালী করুন।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
- যদি ব্যথা তীব্র হয় এবং দিনে দিনে বাড়তে থাকে।
- যদি ব্যথার সাথে অন্য কোনো লক্ষণ দেখা দেয়।
- যদি ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরেও ব্যথা না কমে।
কখন সিজার করাতে হয়
গর্ভাবস্থায় অথবা প্রসবের সময়ে এমন কিছু জটিল অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে যে, মা ও গর্ভের শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে নরমাল ডেলিভারির পরিবর্তে সিজারিয়ান ডেলিভারি বেছে নিতে হয়। এর মধ্যে কিছু অবস্থা সম্পর্কে প্রসবের আগে থেকেই ধারনা পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে সিজার করানোর পরিকল্পনা করে রাখা হয়।
অন্যদিকে গর্ভকালীন ও প্রসব সংক্রান্ত কিছু বিশেষ জটিলতার ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে সিজারের মাধ্যমে শিশুর ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
পরিকল্পিত সিজার অপারেশন
নিচের ক্ষেত্রগুলোতে প্রসববেদনা ওঠার আগে থেকেই সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির পরিকল্পনা করে রাখা হয়—
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া
প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল সাধারণত জরায়ুর ওপরের অংশে থাকে। যদি কোনো কারণে প্লাসেন্টা জরায়ুর নিচের দিকে থাকে, তাহলে ডাক্তারি ভাষায় তাকে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ বলে। আপনার এই জটিলতা থাকলে সাধারণত আলট্রাসানোগ্রাম করানোর সময়ে এটি ধরা পড়বে।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে শিশুর নরমাল ডেলিভারির পথে বাধা সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হলে মায়ের ভারী রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়—যা মা ও গর্ভের শিশু উভয়ের জন্যই খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
ব্রীচ অথবা অস্বাভাবিক অবস্থান
প্রসবের জন্য গর্ভের শিশুর আদর্শ অবস্থান হয় এমন—মাথা নিচে ও নিতম্ব ওপরে থাকে, আপনার পিঠের দিকে মুখ করে থাকে এবং ঘাড় এমনভাবে ভাঁজ করা থাকে যেন চিবুক বা থুতনি বুকে লেগে থাকে। তবে শিশুর নিতম্ব কিংবা পা নিচে ও মাথা ওপরে থাকলে সেই অবস্থানকে ডাক্তারি ভাষায় ‘ব্রীচ’ বলা হয়।শিশু ‘ব্রীচ’ অবস্থানে থাকলে ডেলিভারির জন্য সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হয়ে দাঁড়ায় সিজারিয়ান অপারেশন। [১]এ ছাড়া গর্ভে শিশুর মাথা নিচে থাকার পরিবর্তে শিশু যদি আড়াআড়িভাবে থাকে, তাহলে কেবলমাত্র সিজারের মাধ্যমেই নিরাপদে ডেলিভারি করানো যায়।
[২]যমজ শিশুঃ
যদি আপনার গর্ভে একাধিক সন্তান থাকে, তাহলে সিজার করানোর প্রয়োজন হতে পারে। এমন হলে যে সবক্ষেত্রেই সিজার করাতে হবে, তা নয়। অনেকসময় নরমাল ডেলিভারিও সম্ভব।
তবে যদি গর্ভে দুটি যমজ শিশু থাকে এবং প্রসবের রাস্তায় এগিয়ে থাকা শিশুটির মাথা নিচের দিকে না থাকে, তাহলে সিজারিয়ান পদ্ধতি বেছে নিতে হতে পারে। সেই সাথে গর্ভে যত বেশি সন্তান থাকে, সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির সম্ভাবনাও তত বেড়ে যায়।[৩]প্রসবের রাস্তা ও শিশুর আকারঃ
যদি গর্ভের শিশুর আকার আপনার প্রসবের রাস্তার তুলনায় যথেষ্ট চওড়া না হয়, তাহলে নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয় না। তুলনামূলকভাবে ছোটো প্রসবের রাস্তা ও যোনিপথ দিয়ে বড় আকারের শিশু প্রসব করা খুবই কষ্টসাধ্য বা অসম্ভব হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সিজার করানোর পরিকল্পনা করা হয়।
[৪]স্বাস্থ্য সমস্যাঃ
যদি আপনার নির্দিষ্ট কিছু রোগ থাকে এবং নরমাল ডেলিভারির তুলনায় সিজার করলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য বেশি নিরাপদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির পরিকল্পনা করে রাখা হবে। এমন রোগের মধ্যে রয়েছে অতি উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের নির্দিষ্ট কিছু রোগ এবং ব্রেইনের নির্দিষ্ট জটিলতা।
[৫]ইনফেকশনের সম্ভাবনাঃ
আপনার যদি এমন কোনো ইনফেকশন হয়ে থাকে যা যোনিপথ দিয়ে প্রসবের সময়ে শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সিজারের মাধ্যমে শিশুর ডেলিভারি করানো হতে পারে। যেমন: এইচআইভি ইনফেকশন ও যৌনাঙ্গের হার্পিস।[৬]পূর্বের সিজার অপারেশনঃ যদি আগে কখনো সিজার করানোর সময়ে পেট ও জরায়ু কাটার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে বর্তমান শিশুর জন্যও সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির প্রয়োজন হতে পারে।
[৭]ঐচ্ছিক সিজারঃ
কেউ কেউ নরমাল ডেলিভারির পদ্ধতি ও প্রসববেদনা থেকে দুশ্চিন্তায় ভুগতে পারেন এবং সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবে আগ্রহী হতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার বয়স, ওজন, উচ্চতা ও ভবিষ্যতে আর বাচ্চা নিতে চান কি না—এমন কিছু বিষয় বিবেচনা করে ডেলিভারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবেন।
উল্লেখ্য, আপনার সাথে প্রসববেদনা কমানোর বিভিন্ন চিকিৎসা ও সিজার সংক্রান্ত নানান ঝুঁকি বিবেচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সাধারণত একান্ত প্রয়োজন না হলে ঐচ্ছিকভাবে সিজারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না।
পরিকল্পিত সিজার নিয়ে কিছু পরামর্শ
যদি ডাক্তার আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য সিজারিয়ান অপারেশনকে সবচেয়ে ভালো ডেলিভারি পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করেন, সেক্ষেত্রে এরকম মনে করার পেছনে কারণগুলো কী—এই বিষয়ে তার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করে সিজারিয়ান ডেলিভারির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন।
পরিকল্পিত সিজার সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৯তম সপ্তাহের পর করানো হয়। কেননা ৩৯ সপ্তাহের আগে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন: শ্বাস নিতে কৃত্রিম সহায়তার প্রয়োজন পড়তে পারে, যার জন্য তাদের স্পেশাল কেয়ার ইউনিটে বা নিওনেটাল আইসিইউতে রাখতে হয়।
গর্ভকালীন চেকআপে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে আগেভাগেই আপনার ডেলিভারির পরিকল্পনা ঠিক করে রাখুন। আপনার যেন নরমাল ডেলিভারির প্রক্রিয়া শুরু না হয়ে যায়, এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সময়মতো, অর্থাৎ সাধারণত ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখের আগেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
অনেকসময় নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি থাকার পরও আপনার সিজার করতে হবে—এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি বা জরুরি ভিত্তিতে সিজার অপারেশন করাতে হয়। যেমন—
প্রসব সংক্রান্ত
যদি স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে সেটা ঠিকমতো অগ্রসর না হয় কিংবা প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সিজার করাতে হতে পারে। যেমন, সন্তান প্রসবের জন্য পেটে যে সংকোচন হয় সেটা যথেষ্ট জোরালো না হলে অথবা সংকোচনগুলোর মধ্যে লম্বা বিরতি থাকলে প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রশস্ত হয় না। ফলে যোনিপথ দিয়ে নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। এটি সিজারিয়ান ডেলিভারি বেছে নেওয়ার অন্যতম কমন কারণ।
যদি আপনার সন্তানকে দ্রুত বের করা আনার দরকার পরে। যেমন: যদি গর্ভফুল অকাল বিচ্ছিন্ন হয়, তাহলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো হতে পারে। এই জরুরি অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন’ বলা হয়।
প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন হলে সাধারণত একটানা তীব্র পেট ব্যথা হয়। সাথে যোনিপথে ভারী রক্তপাত হতে পারে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে থাকার কারণে মা ও শিশু উভয়ের জীবনই হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই এমন কোনো লক্ষণ থাকলে দেরি না করে হাসপাতালে যাওয়া খুবই জরুরি।এ ছাড়া শিশু যদি আকারে প্রসবের রাস্তার তুলনায় বেশি বড় হয় কিংবা নিরাপদে নরমাল ডেলিভারির জন্য সঠিক অবস্থানে না থাকে এবং বিষয়টি যদি আগে থেকে ধরা না পড়ে, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে সিজারের মাধ্যমে শিশুর ডেলিভারি করানো প্রয়োজন হয়।
শিশু সংক্রান্ত
যদি কোনো কারণে শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদানের অভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয় এবং বিশেষ পদ্ধতির (যেমন: ফোরসেপ ও ভেন্টুস) সাহায্য নিয়েও নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব না হয়, তাহলে নিরাপদ ডেলিভারির জন্য সিজারিয়ান অপারেশন বেছে নেওয়া হয়।
শিশুর এই অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘ফিটাল ডিসট্রেস’ বলা হয়। গর্ভে শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া কিংবা নড়াচড়ার ধরনে পরিবর্তন আসার মতো বিভিন্ন লক্ষণের সাহায্যে শিশু ফিটাল ডিসট্রেসে আছে কি না সেটি বোঝা যেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে শিশুর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হতে পারে।যদি সাধারণ প্রসব প্রক্রিয়া গর্ভের শিশুর ওপর অতিরিক্ত বা অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে শিশুর হার্ট রেট স্বাভাবিক মাত্রার, অর্থাৎ মিনিটে ১১০–১৬০ হার্টবিটের চেয়ে কমবেশি হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির প্রয়োজন হতে পারে।
যদি আম্বিলিকাল কর্ডে চাপ পড়ার কারণে শিশু যথেষ্ট অক্সিজেন না পায়, তাহলে সিজারিয়ান ডেলিভারি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত ডাক্তাররা ফিটাল হার্ট রেট মনিটরের সাহায্যে গর্ভের শিশুর অবস্থা পর্যবেক্ষণের সময়ে এই সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকেন।
আম্বিলিকাল কর্ডকে আমরা ‘নাড়ি’ হিসেবে চিনি। এটি গর্ভের শিশুকে প্লাসেন্টার সাথে তারের মতো লাগিয়ে রাখে। এই নাড়ি দিয়েই মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে রক্ত, পুষ্টি ও অক্সিজেন আসে।
গর্ভবতী সংক্রান্ত
যদি আপনার গর্ভকালীন বিশেষ জটিলতা থাকে (যেমন: প্রি-এক্লাম্পসিয়া ও এক্লাম্পসিয়া) এবং সময়মতো যোনিপথে ডেলিভারি করানো সম্ভব না হয়, তাহলে দ্রুত ডেলিভারির জন্য সিজারিয়ান সেকশন বেছে নিতে হয়।
ওপরে উল্লিখিত অনেকগুলো জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে এমন কিছু বিষয় হলো: মায়ের অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, বেশি বয়সে গর্ভধারণ, উচ্চ রক্তচাপ ও ধূমপান। জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এসব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এতে জটিলতার ঝুঁকি কমে, ফলে সিজারের প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। এভাবে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখলে তা নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
সিজারিয়ান অপারেশনের ঝুঁকি
সাধারণত সিজারিয়ান অপারেশন খুবই নিরাপদ একটি অপারেশন। তবে অন্য সব বড় অপারেশনের মতো এখানেও কিছু ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থা ও সিজারের ধরনের ওপর। সাধারণত অল্প সংখ্যক অপারেশনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসার মাধ্যমে সাধারণত এসব সমস্যার সমাধানও করে ফেলা যায়। তবে বিরল কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
প্রসূতির ঝুঁকি
- জরায়ু, এর আশেপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাটা স্থানের ইনফেকশন: এক্ষেত্রে জ্বর, পেট ব্যথা, যোনিপথে অস্বাভাবিক স্রাব ও ভারী রক্তপাত, কাটা স্থান ফুলে লাল হয়ে যাওয়া ও পুঁজ বের হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এসব সমস্যা বেশ কমন। তবে সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ:ভারী রক্তক্ষরণ হলে আপনাকে কখনো কখনো রক্তদান করা হতে পারে। বিরল কিছু ক্ষেত্রে আবার অপারেশন করে রক্তপাত বন্ধ করতে হতে পারে। এমনকি রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব না হলে জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হতে পারে।
- রক্ত জমাট বাঁধা:পায়ের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে একটা চাকা তৈরি হতে পারে। এটা থেকে পায়ে ব্যথা হয়ে পা ফুলে যেতে পারে। জমাট বাঁধা রক্ত নালী থেকে ছিটকে ফুসফুসে গিয়ে আটকে যেতে পারে—যা থেকে প্রাণঘাতী শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- মূত্রথলি, মূত্রনালী ও জরায়ুর আশেপাশের অঙ্গে আঘাত: অপারেশনের সময়ে মূত্রনালী অথবা নাড়িভুঁড়িতে আঘাত লাগতে পারে। এ থেকে গুরুতর জটিলতা তৈরি হয়ে আরেকটি অপারেশন করার প্রয়োজন হতে পারে।
- স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে দেরি হওয়া: সিজার করলে নরমাল ডেলিভারির তুলনায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে। এজন্য শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক জীবন ব্যহত হতে পারে।
- অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া: অ্যানেস্থেসিয়ার ঔষধসহ চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ঔষধে আপনার রিঅ্যাকশন হতে পারে।
- বর্তমান শিশুর জটিলতাশরীরের কোথাও কেটে যাওয়া: জরায়ু কাটার সময়ে শিশুর এমন আঘাত লাগতে পারে। তবে আঘাতটি সাধারণত তেমন গুরুতর হয় না। কোনো জটিলতা ছাড়াই সহজে সেরে যায়।
- শ্বাসকষ্ট: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ৩৯ সপ্তাহের আগে শিশুর ডেলিভারি হলে এই সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে নবজাতককে হাসপাতালে কিছুদিন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। শিশু সাধারণত অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে।
- সীমিত রোগ প্রতিরোধ: শিশু সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হওয়ার সাথে জন্মের প্রথম বছরে শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন হওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে।[৫] এ ছাড়া সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্মানো শিশুদের নির্দিষ্ট টিকা দেওয়ার ফলে শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে—তা সিজারের মাধ্যমে জন্মানো শিশুদের তুলনায় বেশি।[৬] তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ গর্ভধারণে ঝুঁকি
সাধারণত সিজারিয়ান অপারেশনের পর পরবর্তী গর্ভাবস্থা অথবা জন্মদানের বেলায় নারীদের তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সিজারের পর আবার গর্ভধারণ করলে গর্ভাবস্থা ও প্রসব সংক্রান্ত ঝুঁকি বেড়ে যায়।যেমন—গর্ভফুল ও জরায়ুর মধ্যে অস্বাভাবিক সংযোগ হওয়া। এর ফলে গর্ভফুল বের করতে সমস্যা হতে পারে। যেমন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া। ক্ষেত্রবিশেষে জরায়ু পুরোপুরি কেটে ফেলে দিতে হতে পারে
জরায়ুতে সেলাইয়ের স্থানটি খুলে যাওয়া অথবা জরায়ু ফেটে যাওয়া
মৃতপ্রসব
এসব জটিলতার কথা মাথায় রেখে সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে সিজার না করালেই নয়, অর্থাৎ অপারেশনের ঝুঁকির তুলনায় উপকারিতা বেশি দেখা যায়, সেসব ক্ষেত্রেই সিজার করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়
উপসংহার:
সিজার পরবর্তী কোমর ব্যথা সাধারণত অস্থায়ী। তবে যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url